করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





রম্যরচনা
তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ
তাপস রায়
পরিচালক সিনেমা বানাবেন। দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে তিনি পুরনো মুখ। কিন্তু তার ক্ষেত্রে ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’ এই প্রবাদ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তিনি ভাত বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছেন। হঠাৎ করেই ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন সিনেমা বানাবেন। এবারের সিনেমায় একের পর এক চমক রাখতে চান তিনি। প্রথম চমক নতুন নায়ক-নায়িকা! এ কারণে কোমরে গামছা বেঁধে তিনি নতুন মুখের সন্ধানে নেমেছেন।
প্রডিউসারের আবার এত খোঁজাখুঁজির সময় নেই। তিনি চলচ্চিত্রে নতুন, খোঁজেন ব্যবসা। নতুন মুখের আইডিয়াটা পরিচালককে তিনিই দিয়েছেন। সুরকার বেলা-অবেলায় তবলায় তাল ঠুকছেন আর খুঁজছেন নতুন নতুন সুর। নতুন সুরে চাই নতুন কণ্ঠ। সুতরাং প্রডিউসারের প্রেরণায় কিংবা প্যানায় তাকেও নতুন কণ্ঠ খুঁজতে হচ্ছে।
ওদিকে গল্পকার পড়েছেন বেকায়দায়। তিনি হলিউড, বলিউড, ঢালিউড, টালিউডের প্রায় সব সিডি, ডিভিডি দেখে শেষ করে ফেলেছেন। কোথাও নতুনত্ব কিছু নেই। তিনি গল্পের প্লট খুঁজে পাচ্ছেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় গল্পকার পরিচালককে গিয়ে ধরলেন- ভাই এখন উপায়?
পরিচালক অনামিকা এবং মধ্যমার মাঝখানে সিগারেট নিয়ে রাজসিক এক টান দিয়ে এস্ট্রেতে ছাই ঝাড়লেন। তারপর সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলার মতো তুড়ি বাজাতে বাজাতে বললেন, ওই মিয়া চিন্তা কী! এই যে হগলতে মিল্যা খোঁজাখুঁজি করতাছে এইডাই তো সিনেমা!
শুনে গল্পকার টিকটিকির মতো টিক টিক সুরে তাল মেলালেন- তাইতো! এটা তো তার মাথায় আসে নি! গুগল তো দুই দিনের, সৃষ্টির শুরু থেকেই চলছে সার্চিং! কে যে কী খুঁজছে, কে পাচ্ছে, কে পেয়ে হারাচ্ছে, কে পাওয়ার আগেই হারাচ্ছে- উফ্!
কাহিনি এবার জমবে ভালো- ভাবতে ভাবতে গল্পকারের মাথায় নতুন ভাবনার উদয় হলো- এ সিনেমার নাম কী?
এবার পরিচালক চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলেন। তারপর হঠাৎ চেহারায় ইউরেকা ভাব এনে উৎফুল্ল কণ্ঠে লাফিয়ে উঠে বললেন, তামাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ!
বাংলাদেশ আমাকে খুঁজবে কেন? গল্পকারের কণ্ঠে বিস্ময়।
ধুর! বাংলাদেশ আপনাকে খুঁজবে কোন দুঃখে? এইটা সিনেমার নাম।
অ।
ব্যস্ গল্প পাওয়া গেল। নামও পাওয়া গেল। এখন নতুন মুখ হলেই হয়। ডাকা হলো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টওয়ালাদের। তারা এ যুগের আলাদিনের দৈত্য। চাওয়া মাত্র ঠিক ঠিক সব ম্যানেজ করে ফেলল। সপ্তাহের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন গেল। রেডিও, টিভিতে সেই বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকল অনুষ্ঠান। বেঢপ বিলবোর্ড, ফেস্টুনে ছেয়ে গেল দেশ। দেয়ালে চিকা মারা হলো রাতের আঁধারে চুপচাপ। এক কথায় হইহই রব পরে গেল চতুর্দিকে।
সিনেমার নায়িকা হওয়ার জন্য কাজের বুয়ারাও লাইনে দাঁড়াল। তাদের দেখে ত্রিগুণ উৎসাহে নায়ক হওয়ার বাসনায় ছুটে এলো বাগানের মালি, পাজেরোর ড্রাইভার, এমনকি বহুতল ভবনের দারোয়ান।
দেশজুড়ে কয়েক মাস ধরে চলল বাছাইপর্ব। সে এক এলাহি আয়োজন! সিনেমার কাজ শুরু হওয়ার আগেই সিনেমা বাম্পার হিট!
হাজার হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে থেকে ছেঁকে তোলা হলো মাত্র কয়েকজনকে। তাদের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হলো ইয়েস কার্ড। আর যারা পারলেন না তাদের মনে গেঁথে রইল দুঃখ।
ইয়েস কার্ডধারীদের এনে তোলা হলো তারকাচিহ্নিত হোটেলে। গ্রুমিং সেশন, অ্যাটিচুড, ফিটনেস ট্রেনিং, মেকওভার কত যে আয়োজন! ইয়েস কার্ড পেয়ে রাজশাহী থেকে আম্মুকে সাথে নিয়ে এলেন বিলকিস বানু। তার চোখে-মুখে রঙিন স্বপ্ন। আংশিক নয়, সম্পূর্ণ রঙিন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে পাউডারের মতো গুঁড়া গুঁড়া হতে খুব বেশি সময় লাগল না। আয়োজকরা তাকে ডিসকোয়ালিফাইড ঘোষণা করলেন। কারণ বিলকিস বানুর আম্মু মেয়েকে হোটেলে কিছুতেই একা রাখতে রাজি নন।  
বিলকিস বানুর বট পাতার মত মুখ, টিকালো নাক যেন সেই পাতার প্রধান শিরা, টানা টানা চোখ, সেই চোখে টলমল জল। আহা! বিলকিস বানু জানল না জীবনে সে কী সুযোগটাই না হারাল।
ওদিকে কিছুতেই সুযোগ হারাতে চায় না হিকমত আলী। ইয়েস কার্ড পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার হেঁচকি উঠতে শুরু করেছিল- আনন্দে। সেই আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গেল যেদিন ডিরেক্টর স্বয়ং তার রুমে দেখা করতে এলো। সে নিজ খরচে ডিরেক্টরের ফুল ফ্যামিলি সিঙ্গাপুর পাঠিয়ে দিল সাত দিনের ট্যুরে। এরপর তার ফুরফুরে মুড দেখে কে! ফলও সে  পেল হতেনাতে। পরিচালক একদিন কাছে ডেকে পরম মমতায় নাম ছেঁটে দিলেন। হিকমত আলী থেকে তার নাম হয়ে গেল ‘হিকু’। নাম শুনে প্রথমে অবশ্য তার হেঁচকি উঠেছিল, কিন্তু এ ক’দিনেই সে শিখে গেছে হেঁচকি গোপন করার কৌশল!
‘তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ সিনেমার নায়ক ভেতরে ভেতরে ঠিক হয়ে গেছে। এখন নায়িকা নির্বাচন বাকি। ওদিকে প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ড চলছে। এ রাউন্ডে প্রশ্নের মাধ্যমে নায়িকার বুদ্ধিমত্তা যাচাই করা হবে। মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন। অনুমানেও এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায়। লেগে গেলেই কেল্লাফতে! যে জিতবে সে তো নায়িকা হবেই, মিলবে নগদ দশ লাখ টাকা- ফাও।
নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হলো প্রতিযোগিতা। দেশবাসী সিনা টান করে টান টান উত্তেজনা নিয়ে বসল টিভি সেটের সামনে। বিজ্ঞ বিচারকদের মধ্য থেকে প্রথম প্রশ্ন করা হলো মিস লতাকে।
আপনাকে নায়িকা বানানো হলে চরিত্রের প্রয়োজনে কতটুকু খোলামেলা হতে পারবেন?
ক. টারজানের মতো
খ. সম্ভব নয়
গ. পরিচালকের চাহিদা মতো  
ঘ. সানি লিওনের মতো         
মিস লতা এ প্রশ্নের কী উত্তর দেবে ভেবে পেল না। সময় চলে যাচ্ছে দেখে বিচারক তাকে একটি সুযোগ দিলেন।
আপনার একটি লাইফ লাইন আছে। আপনি কি পরামর্শের জন্য কারো সঙ্গে কথা বলতে চান?
হ্যাঁ, আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
মিস লতা বয়ফ্রেন্ডের পরামর্শ চাইল। কিন্তু চাইলেই তো হবে না, বয়ফ্রেন্ডের মোবাইল তখন বিজি। সে তখন মিস লতাকে এসএমএস করায় ব্যস্ত। যত এসএমএস তত সম্ভাবনা!
অনেক চেষ্টার পর বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেল। টেলিফোনের ও প্রান্ত থেকে বয়ফ্রেন্ড ‘খ’ সিলেক্ট করে দিল। কিন্তু মিস লতার মনে তখন নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন লকলকিয়ে বেড়ে উঠেছে। সে বয়ফেন্ড্রকে মনে মনে ‘গারল’ বলে রাগে গজরাতে গজরাতে সেই রাগ চেপে হাসিমুখে ‘গ’ সিলেক্ট করল। বিচারকম-লী বুঝে গেলেন তারা যা খুঁজছেন সম্ভবত সেটি পেয়ে গেছেন।
কিছুদিন পরের ঘটনা। শুভদিন দেখে শুরু হলো সিনেমার কাজ। ঘটনার ঘনঘটায় কাজ এক সময় শেষও হলো। মহা ধুমধামে মুক্তি পেল ‘তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’।
কিন্তু বিধিবাম! তবুও খোঁজাখুঁজির শেষ হলো না। সিনেমা হল  মালিকেরা এই ছবির দর্শক খুঁজতে লাগলেন। আর দর্শক খুঁজতে লাগলেন সিডি। প্রডিউসার খুঁজতে লাগলেন নতুন ডিরেক্টর। ডিরেক্টর এগেইন ফের পুনরায় আবার বেরিয়ে পড়লেন নতুন মুখের খোঁজে।