করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





মার্কেজ ও ক্যাস্ট্রো
মার্কেজের প্রতিটি রচনা মুদ্রণের আগে প্রয়োজনে কলম চালিয়েছেন ক্যাস্ত্রো। মার্কেজ তার পান্ডুলিপি প্রকাশকের কাছে হস্তান্তরের আগে তা হাভানায় পাঠাতেন ক্যাস্ত্রোর কাছে। বিশ্বজুড়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রতীক এবং মুক্তবিশ্ব তথা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কঠোর বিরোধী ফিদেল ক্যাস্ত্রো বিশ্ব সাহিত্যকেও প্রভাবিত করেছেন তার মতো করে।  ২৫ নভেম্বর রাত দশটায় পৃথিবীর বুকে শেষ শ্বাসটি গ্রহণ করা ফিদেল ক্যাস্ত্রো কেবল অবসরে নিজেই লেখেননি। দীর্ঘকাল ধরে নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের রচনা সম্পাদনায় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সেই ১৯৭০-এর শেষে এসে দু’জনে পরিণত হন ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে। আর তারপর থেকেই মার্কেজের প্রতিটি রচনা মুদ্রণপূর্বক প্রতিটি লাইনে প্রয়োজনে কলম চালিয়েছেন ক্যাস্ত্রো। ড. স্টেফানি পানিচেলি যিনি অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে লাতিন আমেরিকা বিষয়ক প্রভাষক তিনি গার্ডিয়ানকে জানান, ‘ফিদেল ছিলেন একজন একনিষ্ঠ পাঠক। সেই ১৯৭৭ এ মার্কেজ যখন ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে মিলিত হন তারা দীর্ঘ সময় ধরে সাহিত্য নিয়ে মতবিনিময় করেন। ফিদেল মার্কেজকে তার পান্ডুলিপি পড়ে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আরও জানান, সাহিত্য উপলব্ধির তার রয়েছে গভীর সত্তা।’
২০১৪ তে মৃত্যুবরণকারী কলাম্বিয়ান নোবেল বিজয়ী লেখক মার্কেজ ছিলেন কিউবা বিপ্লবের একনিষ্ঠ সমর্থক। এই সমর্থন বজায় ছিল শেষ পর্যন্ত। পানি চেলি যিনি ক্যাস্ত্রো-মার্কেজ সম্পর্ক নিয়ে একটি বইয়ের সহ-লেখক। তার ২০০৯ এ প্রকাশিত ‘ফিদেল ও গাবো’ নামক বইয়ে জানান, মার্কেজ তার পান্ডুলিপি প্রকাশকের কাছে হস্তান্তরের আগে তা হাভানায় পাঠাতেন ক্যাস্ত্রোর কাছে। পানচেলির ভাষায় ক্যাস্ত্রোর সংশোধনী ছিল ঘটনা ও ব্যাকরণনির্ভর। তাতে ক্যাস্ত্রো কোনোভাবেই আদর্শিক প্রভাব বিস্তার করেননি। মার্কোজের ‘দি স্টোরি অফ শিষরেকড সেইলর’ এর পান্ডুলিপি পড়ে ক্যাস্ত্রো মার্কেজকে জানান, তিনি জলযানটির গতি মাপতে ভুল করেছেন! এই মত মার্কেজকে উৎসাহিত করে ক্যাস্ত্রোকে তার পান্ডুলিপি দেখাতে। এই সংশোধনীর আরেকটি বর্ণনা তিনি তুলে এনেছেন মার্কেজের ‘ক্রনিক্যাল অফ এ ডেথ ফোরটোল্ড’ গ্রন্থে’ ক্যাস্ত্রো মার্কেজকে জানান, তার ঘাতক রাইফেলের বর্ণনায় ভুল রয়েছে। ক্যাস্ত্রো আরও বলেন, গার্সিয়া মার্কেজের চরিত্রে রাইফেল এ ব্যবহৃত বুলেটের বিষয়টিও আরও বিবেচনার দাবি রাখে।
১৯৭৭ এ তারা কিউবার এক হোটেলে দু’জন মিলিত হন। যদিও বলা হয় এই দেখা নিহায়েত দৈবাৎ। কিন্তু‘ পানচেলি মনে করেন এই সাক্ষাতের পেছনে ক্যাস্ত্রোর পরিকল্পনা কাজ করেছে। ক্যাস্ট্রো যখন জানতে পারেন এ  কলম্বিয়ান লেখক আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে ‘লাইফ ইন কিউবা’ নামে একটি বইয়ের রসদ সংগ্রহে কিউবায় অবস্থান করছেন তখন ক্যাস্ত্রো পরিকল্পিতভাবেই তার সঙ্গে মিলিত হন। উল্লেখ্য যে, বইটি আলোর মুখ দেখেনি।
গার্সিয়া মার্কেজের ব্যক্তিগত গ্রন্থশালা যা টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যারি রেনসম সেন্টারে সংরক্ষিত হয়েছে সেখানে একটি নোটে দু’জনের আন্তরিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়। যা ক্যাস্ত্রো লিখেছিলেন লা ভিক্টোরিয়ার সামনে এবং এতে তিনি মার্কেজকে প্রিয় ডাক নামে সম্বোধন করে লিখেন, ২০১০ এ হাইতির প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর। তিনি লেখেন- ‘আমি এখানে কোনো বক্তৃতা দিচ্ছি না। সব ঝামেলা পেছনে ফেলে আমি কাজ থেকে ছুটি নিয়েছি পড়ব বলে। আমি তোমার  গল্পগুলো অনুভব করি। দি প্লেগ ইন হাইতি আমাকে মনে করিয়ে দেয় কলেরা আক্রান্ত সময়ে এক ভালোবাসার গল্প।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ যিনি তার রচনা দিয়ে প্রভাবিত করেছিলেন একাধিক বিশ্বনেতাকে হেনরি র‌্যানসেম সেন্টারে সংগৃহীত বইয়ের মধ্যে বিল ক্লিনটনের ‘মাই লাইফ’ গ্রন্থে’র  স্প্যানিশ অনুবাদের এক কপি পাওয়া যায় যাতে ক্লিনটন লিখেছেন- ‘আমার বন্ধু গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজকে ধন্যবাদসহ। তোমার জীবন, অনুপ্রেরণা আর মহানুভবতার জন্য।’ এই ঔপন্যাসিক ক্লিনটনের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিউবা নিয়ে কথা বলতেন বলেও জানা যায়।
নিজ গ্রন্থের বিষয়ে ক্যাস্ত্রোর মতামত গ্রহণ করলেও এটা জানা যায়নি যে তিনি ক্যাস্ত্রোকে সমান সহযোগিতা করতেন কিনা। ১৯৭৮ এ এক সাক্ষাতকারে মার্কেজ বলেন, তিনি মুখোমুখি ক্যাস্ত্রোর সমালোচনা করতে পারেন হয়ত, কিন্তু প্রকাশ্য সমালোচনা কখনই নয়।
অ্যানা হার্ভে এই ক্যাস্ত্রো-মার্কেজ যুগলবন্দীর সাফল্য লাভকে এক বিরল ঘটনা বলে বর্ণনা করে জানান- ‘আধুনিক যুগে বেশিরভাগ মহৎ শিল্পী নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিকতাবিরোধী বলে ভাবতে ভালবাসেন আর রাষ্ট্রনায়কদের সাহিত্য জ্ঞান নিয়ে যত কম বলা যায় ততই ভালো।’
এর বাইরেও ২০০৬ এর পরে আমরা ক্যাস্ত্রোকে মনোনিবেশ করতে দেখেছি লেখালিখিতে। প্রচুর লিখেছেন তিনি নিজের নানান ভাবনার কথা। জলবায়ু সমস্যা থেকে রাজনীতি হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে তার মত প্রকাশ করেছেন তিনি। মজার বিষয় হলো অবসরেও যেমন তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি। আর তার লেখায় তিনিও জবাব দিয়েছেন সমান তেজে। জর্জ বুশকে উৎসর্গ  করা তার রচনা- স্বপ্নের মৃত্যু নেই বহুল আলোচিত। তার দেয়া ভাষণ ও সময়ে উঠে আসবে সাহিত্য মর্যাদা নিয়ে। (বিদেশি পত্রিকার অনুসৃতি)