করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





ভাষা ভালোবাসা, ভাষা শরণার্থী
অ্যাঞ্জেলা মুহুরী
মাঝে মাঝে মা পাশে ফোনে আলাপ করে। আমি পাশ থেকে এক তরফা কথা শুনি আলগা করে। "... হ্যাঁ, না, আমার মেয়ে পঁচিশ বছর আগে এখানে এসেছে। না না বাংলা কেন ভুলবে? মাতৃভাষা না, ভোলা কি চাট্টিখানি কথা!" অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না, ওই তরফের উত্তর। ধরে নিন, এরকম কিছু একটা: "কি বলেন, বৌদি! আমার ছেলে/ মেয়ে/ জামাই/ ভাইপো তো মাত্র... বছর আগে এসেছে, এর মধ্যেই বাংলা-টাংলা ভুলে শেষ।"
আমি কিন্তু বাচ্চাদের কথা বলছি না, প্রাপ্তবয়স্কদের কথা বলছি। এই ধরনের কথাবার্তা যখন আমার থেকে জুনিয়রদের সম্মন্ধে শুনি, প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় "পুরোপুরি ১০০% চপেটাঘাত কেস!" বাংলা এখনো বলতে লিখতে পারি এর মধ্যে কোন গর্বের কিছুতো দেখি না আমি। তবে কিনা দুই একটা শব্দ দরকার মত মাঝে মাঝে আর মনে আসে না, তখন যে কি অসহায় লাগে সে আর বলার না। ধরেন, পিসিকে ফোনে মনের মাধুরী মিশিয়ে একটা রান্নার কথা বলছি। ওমনি সময় দুম করে ভুলে গেলাম "খুন্তি" শব্দটা। এমনিতে কিন্তু এই কথাটার তেমন কোন সম্মান নেই, একেবারেই এলেবেলে ঘরোয়া একটা শব্দ এটা। কিন্তু ভেবে দেখেন, এর কোন বিকল্প ও তেমন নেই। হাতা বা খুন্তি। এখানেই শুরু, ওখানেই শেষ। যাক বাবা, বলছিলাম একটা রান্নার কথা, ঠেকে গেলাম খুন্তিতে! কি অপমান একবার চিন্তা করে দেখেন! আবার এত কথা ভাবতে গিয়ে দেখা গেল খুন্তি কথাটার ইংরেজিও ভুলে গেছি। এবার তো একুল গেল, ও কুলও গেল! এবার তো আমি পুরো ভাষা শরণার্থী হয়ে গেলাম। কোথাও কোন ঠাঁই নেই। এখনতো দেখি শ্যারেড খেলার মত অবস্থা আমার (এই খেলায় আপনার কাছে একটা শব্দ থাকবে যেটা দলের অন্যরা কেউ দেখতে পাবে না। মুখে কিছু না বলে হাতপা নাড়িয়ে অঙ্গভঙ্গি করে বোঝাতে হবে কি শব্দ)। আমি কিনা আবার পেশায় ইংরেজির টিচার, এতো বড় লজ্জার কথা।
যাহোক কড়ে পেতে অনেকক্ষণ পরে হয়ত মনে পড়ে যায় খুন্তি শব্দের অর্থটা, "spatula" বা স্প্যাচেলা। বড়ই বদখত একটা শব্দ, মনে না থাকারই কথা। যাক এ যাত্রায় তবে বাঁচা গেল! আবার কি থেকে কি ভাবছি আরেকদিন, মনে হল "ভিমরুলের ... খোঁচা দিয়ে লাভ কি? ... হ্যাঁ, ভিমরুল কি বাঁধে যেন? ঝাঁপি, বাসা, ঝোপ? "Wasps' nest" ওটাতো বলতে পারি কিন্তু ওটার বাংলা কি হবে? আর তো মনে পড়ে না। মাথাটা এদিক ওদিক ঝাঁকাই, হার্ড ড্রাইভের অনেক ভিতরে ডুব দেই, মেলে না উত্তর। পাশে কেউ নেই, চর্চা নেই, অভিধান নেই, মাকে জিজ্ঞেস করলে নির্ঘাৎ বলবে তারও মনে নেই। ওই দিয়া মেয়েটা খুব ভাল ট্রান্সলেট করে, ওকে কি একটা টেক্সট পাঠাব? ধ্যাত্তেরিকা! মাঝ রাতে ঘুমটুম বন্ধ করে কি জ্বালাতন! হঠাৎ মাঝ রাতে কারেন্ট ফিরে আসা বাতির মত ঝাঁ করে মনে পড়ে যায়, ".... চাক"! ভিমরুলের চাক হয়! ভিমরুলের চাকে খোঁচা দেওয়ার কোন দরকার নেই। যাক হার্ড ড্রাইভটা এখনো আউটডেটেড হয়ে যায় নি তাহলে। আবার মাথায় আসে, চাকে কি চন্দ্রবিন্দু লাগবে? না দেব না? যাকগে, শব্দটা মনে পড়েছে, এই ভাল, আবার বানান ... !
তবে কিনা আশির দশকে বাংলা বিভাগে মানবিক শাখায় পড়েছি, তাও আবার হলিক্রসের বাঘা বাঘা টিচারদের কাছে, এই যাত্রায় বার্ধক্যজনিত কারণে স্মৃতিলোপ না হওয়া পর্যন্ত, ইনশাল্লাহ, বাংলা ভোলার সম্ভাবনা শতকরা .০০৫ ভাগ। হাজার হলেও রক্ত দিয়ে কেনা ভাষা। মনে রাখার মধ্যে কোন গর্ব নেই। ভুলে যাবার ভান করাটাই অপমান- নিজের ও ভাষার।