করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৭ বর্ষ ৭ সংখ্যা
ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লেখক-সংবাদ :





দেখে আসুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা
মো. নাজমুল হুদা
মহান ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম। তার ভেতরেই একটি অবকাঠামো শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের পূর্বপ্রান্তে এবং শহীদ মিনারের পাদদেশে ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন তিন শহীদ শিক্ষকপত্নী বেগম ওয়াহিদা রহমান, বেগম মাস্তুরা খানম এবং শ্রীমতি চম্পা সমাদ্দার। প্রথমের দিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলোর স্থানীয় সংগ্রহ হিসেবেই এর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংগৃহীত স্মৃতি নিদর্শনগুলোর সময়সীমা নির্ধারিত হয় ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন এবং প্রসারিত হয় দেশজুড়ে। এর কারণ উল্লেখ করা যায় ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনে ২১ ফেব্র“য়ারি রাতেই রাজশাহী কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণ এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে রাবি শিক্ষক ড. জোহার আÍদান। বলা হয়, এই স্মৃতিকেই লালন করার জন্য রাবি সংগ্রহশালার সম্প্রসারণ। শিল্পী ফণীন্দ্রনাথ রায়ের তৈরি শহীদ মিনারের মুক্তমঞ্চের গ্রীনরুমেই এই সংগ্রহশালা গড়ে ওঠে। ২১ ফেব্র“য়ারি ১৯৭৬ সালে সংগ্রহশালাটি প্রথম দর্শকদের জন্য খুলে দেয়া হয়। একই বছর তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা আবুল ফজল ৬ মার্চ সংগ্রহশালার প্রথম উদ্বোধন করেন। তখন বিশেষ দিনগুলোতে এটা দর্শকদের জন্য উš§ুক্ত করা হতো। এরপর ২২ মার্চ, ১৯৮৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আমানুল্লাহ আহমদ এর মূল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আয়তন ৬ হাজার ৬শ’ বর্গফুট। এতে ৩টি গ্যালারি রয়েছে। গ্যালারিগুলো নান্দনিক-নৈপুণ্য ও সমৃদ্ধ স্থাপত্যের প্রতীক। এখানে ’৫২, ’৬৬, ’৬৯ ও ’৭১ সালের আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন সংগ্রহীত নিদর্শনগুলো পর্যায়ক্রমে প্রদর্শিত আছে। প্রথম গ্যালারিতে আলোকচিত্র ৫৯টি, প্রতিকৃতি ৬টি, কোলাজ ২টি, শিল্পকর্ম ৮টি, পোশাক ও অন্যান্য বস্তু ৭টি, ভাস্কর্য ১টি, ডায়েরি ও অন্যান্য পাণ্ডুলিপি ৪টি এবং বাঁধাইকৃত আলোকচিত্র ২টি রয়েছে। এতে আরও রয়েছে একুশে ফেব্র“য়ারি ‘৫২ রাতেই রাজশাহীতে (রাজশাহী কলেজ হোস্টেল গেটে) নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের বাঁধাইকৃত আলোকচিত্র, আমতলা সভা, একুশে ফেব্র“য়ারি ’৫২ কালো পতাকা উত্তোলন ও মিছিল একুশে ফেব্র“য়ারি ’৫২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতি, একুশে ফেব্র“য়ারি ’৫২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নগ্নপদ মিছিল, ৫৩ শহীদ মিনার, ঢাকা হল একুশে ফেব্র“য়ারি ৫৩, ১৯৬৯ এর গণ-বিক্ষোভের মুখে পুলিশ বাহিনী ৬৯, বিক্ষুব্ধ জনতা ও ব্যারিকেড ৬৯, শহীদ আসাদ, শহীদ মতিউর, শহীদ রফিক, বরকত, সালাম ও শহীদ শামসুজ্জোহার প্রতিকৃতি, মিছিলের অগ্রভাবে ড. জোহা একুশে ফেব্র“য়ারি ৫৩, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মিছিল ৬৯ যে মিছিলে গুলিবব্ধ ড. জোহা, হাসপাতালে, মৃত অবস্থায় জোহা, কবরে শায়িত ড. জোহা ও ’৭০-এর প্রার্থনা। প্রখ্যাত শিল্পী মোস্তফা মনোয়ারের শিল্পকর্ম, সুজা হায়দারের বর্ণমালা, অসহায় আÍা আবু তাহের, উত্তমদের কোলাজ-মুক্তিযোদ্ধার শার্ট, প্রণব দাসের ভাস্কর্য আর্তনাদ উল্লেখযোগ্য।
দ্বিতীয় গ্যালারিতে আলোকচিত্র ১০৮টি, প্রতিকৃতি ৩৫টি, শিল্পীকর্ম ৯টি, বাঁধাইকৃত আলোকচিত্র ১৯টি, ভাস্কর্য ৩টি, পোশাক ও অন্যান্য বস্তু ৯৯টি ও ডায়েরি ৫টি। এখানে আরও আছে স্বাধীনতা যুদ্ধের ১১ জন সেক্টর কমান্ডার, ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ ও সমর নায়ক জাতীয় ৪ নেতা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ শিক্ষককের প্রতিকৃতি, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণা বাণীর প্রতিলিপি, মুজিব নগরে ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র, ঢাকার রাজপথ, গণ-বিক্ষোভ ৭১, সংগ্রামী জনতা ও পুলিশের সংঘর্ষ, ৭১ ছাত্রী নিগ্রহ, বাংলার গণহত্যা, ২৫ মার্চ, ঢাকার রাজপথ ৭১, আÍসমর্পণ দলিলের চুক্তিপত্র, বাঁধাইকৃত মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত পোস্টার-আমরা সবাই বাঙালি, বাংলার মায়েরা মেয়েরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা, সদা জাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী, শিল্পী রফিকুন্নবীর একাত্তর ফেরা, শিল্পী হাসেম খানের বাংলাদেশ ডিসেম্বর, মাহমুদুল হকের ৭১ দুর্ভিক্ষ, আঃ রাজ্জাকের ভাস্কর্য একজন মুক্তিযোদ্ধা, শহীদদের পোশাক ও অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিস, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান চৌধুরী এবং সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের ডায়েরি ও পাণ্ডুলিপি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহীর শহীদদের ছবি, আলোকচিত্র ও ব্যবহƒত জিনিসপত্র উল্লেখযোগ্য। তৃতীয় গ্যালারিতে আলোকচিত্র ১১২টি, প্রতিকৃতি ১টি, শিল্পীকর্ম ১১টি, বাঁধাইকৃত আলোকচিত্র ১টি, ভাস্কর্য-৬টি, ডায়েরি ও পাণ্ডুলিপি ৪০টি, পোশাক ও অন্যান্য বস্তু ৫৬টি রয়েছে। এখানে পাকবাহিনীর আÍসমপর্ণ দলিল চিত্র, মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ, রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, বিজয়ী মুক্তিসেনা, হানাদারমুক্ত ঢাকা শহর, গণকবর, বুদ্ধিজীবী হত্যা, রায়ের বাজার ঢাকা, বধ্যভূমি, মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহƒত বিভিন্ন অস্ত্র (মাইন, বুলেট, রকেট লাঞ্চার পেশ ইত্যাদি) শহীদ বুদ্ধিজীবী ও শহীদ সাংবাদিকদের ছবিসহ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত একটি আলাদা বোর্ড, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গণকবর থেকে প্রাপ্ত ও অন্যান্য নাম না জানা শহীদদের মাথার খুলি-হাড়গোড় ও ব্যক্তিগত ব্যবহৃত জিনিসপত্র, শিল্পী কামরুল হাসানের মুক্তিযুদ্ধে বিখ্যাত পোস্টার শিল্পী আমিনুল ইসলামের শ্বেতপত্র ৭১ চলচ্চিত্রে স্বাধীনতা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এ সংগ্রহশালার একটি অন্যান্য বৈশিষ্ট্য মুক্তিযুদ্ধ অনুপ্রাণিত তৈলচিত্র, ছাপচিত্র ও জলরং চিত্রের সংগ্রহ। বাংলাদেশের প্রধান চিত্র-শিল্পীবৃন্দ যাদের কাজ এই সংগ্রহে স্থান পেয়েছে তাদের মধ্যে আছেন- আমিনুল ইসলাম, কাইয়ুম চৌধুরী, মোস্তফা মনোয়ার, রফিকুন্নবী, হাসেম খান, মোস্তফা মনোয়ার, রশীদ চৌধুরী ও দেবদাস চক্রবর্তী। এ সংগ্রহশাল��গ্রহে আরও রয়েছে ভাষা আন্দোলন গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক পত্রিকার কাটিং ফাইল। ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিদর্শন পরম যতœ সংরক্ষণ করছে এই সংগ্রহশালা। রাজশাহী এলে দেখে আসতে পারেন এই অসাধারণ সংগ্রহশালা।








লেখা পাঠান, চিঠি লিখুন: [email protected]