করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৭ বর্ষ ৭ সংখ্যা
ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লেখক-সংবাদ :





ছবি বোঝা
নাজিব তারেক
শিল্প কি? শিল্প কি আমরা বুঝি? না বুঝলে কেন বুঝি না?
ক’দিন আগে এক শিশু, ঢাকা শহরে ফ্লাট বাড়িতে জন্ম ও বেড়ে উঠছে, এমন এক শিশু এসেছিল আমার বাসায়। আমার বাসার অতি মিশুক বেড়ালটি তার খেলনা হয়ে গেল। যাওয়ার সময় সেই শিশু বেড়ালটি সোফার উপর রেখে দিয়ে বললো ‘আঙ্কেল, ওর ব্যাটারিটা খুলে রাখো।’

সবাই হেসে উঠলো।

কেন শিশুটির মনে হলো বেড়ালটি ব্যাটারি চালিত? শিক্ষা অথবা অভিজ্ঞতা। তার শিক্ষা বা অভিজ্ঞতার মধ্যে যা কিছু খেলনা সবই ব্যাটারি চালিত। জীবন্ত কোন প্রাণী নেই। তাই বেড়ালটির জীবন্ত অবস্থা সে বোঝেনি। শিল্প বুঝতেও শিক্ষা লাগে।





তবে কি যারা শিল্পশিক্ষা করেনি তারা শিল্পের রস পাবে না?
না, অবস্থাটা সেরকম নয়। তার আগে একটি প্রশ্ন? শিল্প কি বোঝার জিনিস? ‘বোঝা’ বলতে যদি অভিধানের শব্দার্থের মত কিছু হয়ে থাকে তবে আরো একটি প্রশ্ন? আপনি কি আপনার হাতের মোবাইল ফোনটি বোঝেন? আপনি এর ব্যবহার উপায়টি জানেন মাত্র। মোবাইলটি বোঝেন না। যে খুবই প্রাথমিকভাবে বোঝে সে হচ্ছে ‘মেকানিক অথবা ইনজিনিয়ার’, আর যারা একটু গীভরে বোঝেন তারা প্রায় সকলেই নোবেল প্রাইজ বিজয়ী। এখন যদি মোবাইল ফোনটি বুঝতে চান তাহলে?



আপনার বাসার সবচেয়ে কমবয়স্ক সদস্যটি সবচেয়ে দ্রুত মোবাইলের ব্যবহার উপায়টি বুঝতে পারে, কেন? রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ছবি বুঝতে ছবির সামনে বোবা হয়ে দাঁড়াতে হয়’। বোবা মানে পাণ্ডিত্যের বকবকানি বন্ধ করুন। আপনার বাসার সবচেয়ে কমবয়সী সদস্যটি হয়তো এখনো স্কুলেই যাওয়া শুরু করেনি। কিন্তু শিল্পের কোন আপাত ব্যবহারের উপায় নেই। যিনি ঘর সাজাতে, স্ট্যাটাস বাড়াতে ছবি কেনেন, তার কাছে ব্যবহার উপায়টি আছে বলেই তিনি চোখে রঙ দেখেন আর খ্যাতির স্বাক্ষর দেখেন, বোঝাবুঝির সময় নেই তার। বোঝাবুঝির হ্যাপা তার, যিনি ছবি কিনতে অক্ষম; কিন্তু কোন এক ছবি দেখলেই তিনি কাতর হয়ে পড়েন। তার অল্প বিদ্যা তাকে গোলক ধাঁধায় ফেলে দেয়, আবার তিনি ‘নবেল পাওয়ার’ দূরত্ব যাত্রায় অক্ষম। তাহলে উপায়? বেড়ালটিকে খেলনা বানিয়ে ফেলুন, আস্তে আস্তে জানতে পারবেন ওটা ব্যাটারি চালিত না জীবন্ত। অবসর পেলে একটি ডিসকভারি বা অ্যানিমেল প্লানেট চ্যানেল দেখুন, উইকিপিডিয়া কিংবা গুগল দৈত্যকেও কাজে লাগাতে পারেন। জেনে যাবেন বিড়াল কত প্রকার, কি কি।



না জানলেও খুব ক্ষতি নেই, বিড়াল খুবই চমৎকার খেলার সঙ্গী। শুধু ব্যাটারী বা খাবারটা ঠিকঠাক মত দিতে হয়। আর শিল্পহীন জীবন? মোবাইল ফোন বড়ই যন্ত্রণাময় যদি বস ফোনে তাড়া দেয়, অথবা অপর প্রান্তে পাওনাদার। আর হ্যাঁ; বিড়ালটি কামড় দেবে নাকি খামচে দেবে তা নিয়ে শিশুটির কোন শিক্ষা ছিল না। তাই ভয়ও ছিল না। যেভাবে রাস্তার অজস্র অচেনা মানুষই আমাদের সাহস। জনশূন্য পথ, ঘাট, মাঠ আমার ভয়ের কারণ। আমি মানুষ, মনে হয় মানুষ বুঝি, কিন্তু গাছ ঘাস চিনি না তাই এই ভয়। আর যার সাথে আলাপ হলো তিনি কি ভালো মানুষ, না খারাপ মানুষ? গাছ চিনতে গাছের কাছে যেতে হয়, বেড়াল ধরতে বেড়ালের কাছে যে যেতেই হবে।



সৈয়দ হকের বয়ানের সঙ্গে একটু অভিজ্ঞতার মিশেল দিয়ে বলি: ‘শিল্পকলার কাছে যেতে হয়, তবেই না শিল্প কাছে আসতে পারে।’

নভেম্বর ২০১৪








লেখা পাঠান, চিঠি লিখুন: [email protected]