করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৭ বর্ষ ৭ সংখ্যা
ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লেখক-সংবাদ :





পাহাড়ে মেঘের খেলা
গৌরব জি. পাথাং
কখনো মেঘ ছুঁয়েছেন? হাতে মেঘের পরশ পেয়েছেন? যদি না হয়, তবে বান্দরবান চলে আসেন। মেঘ আর বৃষ্টির ছোঁয়া পাবেন। আপনার উপর দিয়ে শুভ্র বলাকার মত মেঘ উড়ে যাবে, আর আপনি মেঘে সিক্ত হবেন। মেঘ আপনাকে প্রিয়ার মত চুম্বন করে সিক্ত করে দিবে। মন সাদা মেঘের ভেলায় চরে ঘুরে বেড়াবে। শুধু তাই নয়, পাহাড় দেখার সুযোগও রয়েছে এখানে। এক সাথে পাহাড় আর মেঘের মিলনদৃশ্য উপভোগ করার যায় এখানে। যারা বৃষ্টিবিলাসী তাদের নিকট বান্দরবানের নীলগিরি রিসোর্ট সেন্টার খুবই জনপ্রিয় স্থান। গত ১৬ই জুন, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে ফাদার মাইকেল সরকার, সিএসসি, সিস্টার ট্রিজা বেবী গমেজ, আরএনডিএম, সিস্টার নিপা পেরেরা, আরএনডিএম, শিশু মঙ্গলের ছেলেদের সঙ্গে নীলগিরিতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেদিন সকাল হতেই অঝরে বৃষ্টি ঝরছিল। তবু বৃষ্টিবিলাসী আমরা বৃষ্টির সান্নিধ্য লাভের আশায় ও মেঘের ছোঁয়া পাবার ব্যাকুলতায় নীলগিরিতে গিয়েছিলাম। নীলগিরি রিসোর্ট সেন্টারটি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দূরত্বে। সমৃদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। রির্সোট সেন্টারটি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। তাই এখানের পরিবেশ খুবই সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ। এখানে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থাও আছে। বান্দরবান থেকে নীলগিরি কিংবা থানচি থেকে নীলগিরি যাবার রাস্তাগুলো সাপের মত একেবেঁকে চলছে তো চলছেই, কোথাও উঁচু, কোথাও ঢালু, কোথাও ইউটার্ন সম্পন্ন রাস্তা। একটু বেখেয়ালি হলেই এই সর্পরাস্তা গিলে ফেলবে। পাহাড়ী রাস্তা বৃষ্টির কারণে ঝরণা হয়ে গেল। রাস্তা দিয়েই পাহাড় থেকে বৃষ্টির জল বয়ে চলতে লাগল। আমরা এই বৃষ্টির মধ্যেই বলিবাজার থেকে গাড়িতে করে নীলগিরিতে গিয়ে পৌঁছলাম। নীলগিরিতে উঠে দেখতে পেলাম পাহাড় থেকে সাদা সাদা মেঘ ধুয়োর মত উড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ অন্ধকার হয়ে গেল আর সাদা মেঘে ঢেকে গেল গোটা পাহাড়টা। যদিও আমরা দাঁড়িয়ে আছি পাহাড়ে কিন্তু মনে হল মেঘের উপর আমরা ভেসে আছি। মেঘ আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে গেল। মেঘের ছোঁয়ায় সজীব হল আমাদের দেহ মন। মেঘের আনাগোনা দেখে সিস্টার ট্রিজা বেবী গমেজ আর নিপা খুবই উল্লসিত। সাদা মেঘ হাতে পেয়ে খুবই পুলকিত। চারিদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলতে লাগল, কি সুন্দর! এখানে না আসলে পাহাড় আর মেঘের এমন মিলন দৃশ্য দেখাই হত না! মনের আনন্দে কেউ কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল। বৃষ্টিতে সবাই ভিজতে পারে না। সবার সুযোগও হয় না। একটা সময় আছে যখন ইচ্ছা থাকা সত্বেও আর ভেজা যায় না। মনে হল, এটাই বৃষ্টিতে ভেজার উপযুক্ত সময়। এ সুযোগ আর আসবে না। ছাতা ফেলে দিয়ে ভিজে ভিজে ঘুরতে লাগলাম। শিশু মঙ্গলের ছোট ছেলেরাও নিজেদের মত করে ছুটাছুটি করে ভিজতে লাগল। চলতে চলতে সবাই মিলে গান ধরলাম- পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে পাগল আমার মন নেচে উঠে---আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে জানিনে জানিনে কিছুতে কেন যে মন লাগে না---, আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়ল তোমার--- গানসহ বৃষ্টির অনেক গান। বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দই অন্যরকম। পরে আমি মেঘাচ্ছন্ন প্রকৃতির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। মেঘগুলো যেন সবুজ পাহাড়ের গাছে গাছে বলাকার মত বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। আবার কিছু মেঘ মুক্ত ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে দূর দিগন্তে। আবার মেঘগুলোর দৃশ্য দেখলে মনে হল শরতের কাশফুল পাহাড়ে ফুটে আছে। ঝরা পাতার মত আমার ক্লান্ত অবষন্ন দেহ মেঘের কোমল স্পর্শে সজীব হল। আমার পাহাড়িয়া মন সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে বলাকার মত এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল। কি অপূর্ব দৃশ্য!

কিছুক্ষণ পর রোদের আলোয় অন্ধকার আকাশ কেটে গেল। মনে মনে আমরা এটাই প্রত্যাশা করেছিলাম। মেঘ-বৃষ্টি আর রোদের খেলা একসাথে উপভোগ করতে। বৃষ্টিতে নীলগিরির দৃশ্য একরকম, রৌদ্রে আরেক রকম। রৌদ্রে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেলে দেখতে পেলাম, দূরে আকাশ কোথাও মিশে আছে। কবি নজরুলের মত বলতে ইচ্ছে হল, “আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ।” সাংগু নদীর জল দূর থেকে সাদা সাদা করে দেখা গেল। দেখে মনে হল, পাহাড়ের ভিতর দিয়ে সাদা পথ একে বেঁকে চলেছে অন্তহীন পথে। সাংগু নদীর জল পাহাড় বিধৌত করে চলেছে। উপর থেকে দেখতে পেলাম, গ্রাম আর অন্য পাহাড়গুলো কত নিচে! আমি যেন দাঁড়িয়ে আছি সমস্ত পাহাড়ের উপরে। আর পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল আমি এই পৃথিবীকে পদতলে রেখেছি। তাই কবি নজরুলের মত বলতে ইচ্ছে হল- “বল বীর- বল উন্নত মম শির! শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!”

পাহাড়ে মেঘ-বৃষ্টি আর রোদের খেলা দেখতে দেখতে মনটা আনন্দে ভরে গেল। আমরা আনন্দ মনে নীলগিরি থেকে নেমে এলাম। কিন্তু মন থেকে বৃষ্টি ভেজার আনন্দ মন থেকে আজও নামাতে পারছি না। বৃষ্টিভেজার অপার আনন্দ মনকে আঁকড়ে আছে। তাই আজ বসে বসে ভাবছি, সেদিন বৃষ্টির আহ্বানে বৃষ্টিবিলাসীরা বৃষ্টিতে ভিজেছিল। বৃষ্টিভেজা এমন দিন, এমন করে, এমন মানুষের সাথে হয়তো কখনো আর আসবে না। হয়তো আর এমন করে কেউ বলবে না- চলো বৃষ্টিতে ভিজি। হয়তো এটাই আমার শেষ স্মৃতি, শেষ সম্বল। আমি দূরে চলে যাব ঠিকই, কিন্তু পড়ে থাকবে আমার স্মৃতি। এই স্মৃতি ছাড়া বৃষ্টিভেজা দিনে মনে করার আর কিইবা আছে!








লেখা পাঠান, চিঠি লিখুন: [email protected]