
আমরা, মানে আমি, কবি এ কে শেরাম, কবি নিতাই সেন এবং পুলিন রায়- আমরা চারজন নিজেদেরকে ছেড়ে দিয়েছি মণিপুরী তরুণ কবি থাঙ্গা তংব্রাম অমরজিৎ-এর কাছে। সে আমাদেরকে তার বালেনোতে ভরে যেখানে নিয়ে যায়, যেদিকে- আমরা সেখানেই যাব। কেননা, আমরা সারাটা দিনের অভিজ্ঞতায় জেনেছি যে, ওর কাছে নিজেদেরকে ছেড়ে দিলে ক্ষতি নেই কোনো। বরং লাভই আছে অনেক। বিশেষ করে রতন থিয়ামের কোরাস রেপার্টরি থিয়েটার দেখতে পারাটা তো এক অসম্ভব-প্রাপ্তি! আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন আমি পুরো মণিপুর রাজ্য জয় করে ফেলেছি। পদ্মফুল শোভিত দিঘি, নির্জনতার প্রান্তর ছাড়িয়ে ছোট্ট কারটা ক্রমেই মূল শহরের কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। শেষ বিকেলের ছায়াঘেরা ইম্ফল শহরটাকে লাগছিল অন্যরকম। যেতে যেতে থিয়েটার করার আরেকটা ভবন চোখে পড়লো পথের ধারে। সেই সূত্র ধরেই আলাপ ওঠায় জানতে পারি, রতন থিয়ামের সমমাপের কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে তারচেয়ে বেশি কর্মযজ্ঞে দীপ্যমান আরেকজন নাট্যব্যক্তিত্বের অস্তিত্ব রয়েছে এই মণিপুরে। তার নাম হেই¯œাম কানহাইলাল।
আশ্চর্য! এ-ভদ্রলোকের নাম তো কখনো শুনিনি। হ্যাঁ। দুর্ভাগ্য। তার নামটা সেভাবে ছড়ায়নি। কানহাইলালও পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত। তিনিও ঢাকায় নাটক করে এসেছেন। নাটকের জন্য রেখেছেন নানামুখী বিস্তর অবদান। এ কে শেরামদা বলছিলেন আর আমি অভিভূত হয়ে শুনছিলাম। পরে ত্রিপুরার মণিপুরী লেখক এল বীরমঙ্গল সিংহের প্রসঙ্গ মণিপুর বই থেকে জানা গেল তার সম্পর্কে আরো অনেক কথা। ১৯৪১ সালের ১৭ জানুয়ারি ইম্ফলের কৈশামথোং থাংজম লৈরকে এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেন কানহাইলাল। বাবা ছিলেন দিনমজুর। মা ছিলেন মণিপুরী নটসংকীর্তনের বিশিষ্ট গায়িকা। জন্মের তিন মাসের মাথায়ই মাকে হারান। জ্যাঠামশাই এবং ঠাকুমার কাছে মানুষ হন। গানবাজনা ও নাট্যপ্রেমী এই জ্যাঠামশাইয়ের প্রেরণাতেই মণিপুরের নিজস্ব নাট্যধারা মোইরাং পর্ব ও পাশ্চাত্যের থিয়েটার দুটোর সঙ্গেই পরিচিত হয়ে উঠেন কানহাইলাল।
১৯৫৯ সালে মেট্রিক পাশ করে উচ্চতর শিক্ষা-লাভের জন্য ইম্ফল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর নাট্যচর্চায় ভালোভাবে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ আসে তার। কলেজের অধ্যাপক বিশিষ্ট নাট্যকার জিসি তোংরার সংস্পর্শে জড়িয়ে পড়েন সোসাইটি থিয়েটারের সঙ্গে। এখানে তিন বছর যুক্ত থাকেন তিনি।
১৯৬১ সালে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেন নাট্য সংগঠন স্টুডেন্ট আর্টিস্ট এসোসিয়েশন। এই সংস্থার পক্ষ থেকে মঞ্চস্থ করেন নিজের লেখা নাটক লাইয়েং অহানবা। এই নাটকটি তার জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই নাটকে অভিনয়ের সুবাদেই ভাবী সহধর্মিনী সাবিত্রী দেবীর সঙ্গে তার পরিচয় এবং ক্রমে ক্রমে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৯৬২ সালে দুজন বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। সাবিত্রী দেবীকে নিয়ে শুরু হয় তার নতুন জীবন।
বিয়ের পর চরম আর্থিক সংকটের কারণে শিল্পীদম্পতিকে কিছুদিনের জন্য ছেড়ে থাকতে হয় তাদের প্রিয় থিয়েটার জগৎ। বাঁচার তাগিদে এ-সময় বাটার দোকানে সেলসম্যানের চাকরিও করতে হয়েছে কানহাইলালকে। নানা ঘাটের পানি খেয়ে শেষে প্রাইমারি স্কুলের ইনভেস্টিগেটর হিসেবে সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন পরিসংখ্যান দপ্তরে। কিন্তু যার রক্তে ঢুকেছে থিয়েটারের নেশা, সে কি সাধারণ জীবনের গ-িতে নিজেকে বন্দী রাখতে পারে? ১৯৬৮ সালে সরকারি চাকুরির নিশ্চিত মাস মাইনের টাকার লোভ ত্যাগ করে নাটক বিষয়ে আরো উচ্চ-শিক্ষা লাভের স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমান নতুন দিল্লি। ভর্তি হন ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায়। কিন্তু ছ’মাস ক্লাস করার পর এনএসডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে আবার ফিরে আসতে বাধ্য হন ইম্ফলে।
আবার বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের জ্বালায় দিশেহারা হয়ে পড়েন কানহাইলাল। চরম হতাশার মধ্যে হঠাৎই পেয়ে যান পছন্দের এক চাকুরি। মনিপুর সরকারের প্রচার দপ্তরের অধীনে ড্রামা ইউনিটের প্রযোজকের পদ। এখানে দশ বছর চাকরি করেছেন তিনি। সরকারি কাজের পাশাপাশি ভালোভাবেই চালিয়ে গেছেন নাট্যচর্চা। ১৯৬৯ সালে গড়ে তুলেন তার নিজস্ব নাট্যসংস্থা কলাক্ষেত্র। পরপর সফল মঞ্চস্থ হতে লাগলো ত¤œলাই (১৯৭৪), কবুই কেইওইবা (১৯৭৩), ইম্ফল ৭৩ (১৯৭৪), খোমদোন মেইরোবী (১৯৭৪), পেবেৎ (১৯৭৫), পুরান ঈশৈ (১৯৭৭), লাইগী মচাশিংগা (১৯৭৮)-এর মতো নাটক।
এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে কলকাতার বাদল সরকার আসেন মণিপুরে নাট্যচর্চার এক কর্মশালা নিয়ে। এই কর্মশালায় অংশ নিয়েই বদলে যায় কানহাইলালের নাট্যচর্চার প্রকৃতি। উন্মোচন হয় সৃষ্টিশীলতার নতুন দিগন্ত।
স্বল্প-দিনের হলেও এনএসডির প্রশিক্ষণ এবং বাদল সরকারের নাট্য-কর্মশালায় যোগদানের ফলে কানহাইলালের নাট্যশৈলী আমূল বদলে গেল। তবে তিনি বাদল সরকারের অন্ধ অনুকরণে না গিয়ে তার কাছ থেকে শেখা নাট্যতত্ত্বকে মণিপুরের সংস্কৃতি ঐতিহ্যের প্রেক্ষিতে প্রয়োগ করেন। সৃষ্টি করেন তার নিজস্ব এক নাট্য ঘরানা। আরো গভীরভাবে নাটকের প্রতি নিবেদিত করেন নিজেকে। ফলে অনিবার্যভাবেই সংঘাত ঘটে সরকারি কাজের সঙ্গে। স্বাধীনভাবে নাট্যচর্চার জন্য ত্যাগ করেন সুবিধের সেই সরকারি চাকুরি। কানহাইলাল ও সাবিত্রী দেবী ডুবে থাকেন শুধু নাটক নিয়ে। দুই বিরল প্রতিভার যৌথ প্রয়াসে সৃষ্টি হয় মেমোইর্স অফ আফ্রিকা (১৯৮৫), রুশোমোন (১৯৮৭), মীগী শারং (১৯৯১), কর্ণ (১৯৯৭), দ্রৌপদী (২০০০), ইজ্জৎ (২০০১), নুপী (২০০২)-এর মতো বিখ্যাত সব নাটক।
এর পাশাপাশি জুটতে থাকে কর্মের স্বীকৃতি। ১৯৯১ সালে কায়রোতে থার্ড কায়রো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে কানহাইলাল ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। নাট্য বিশেষজ্ঞদের বিচারে তার মীগী শারং নাটকটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ছয়টি নাটকের অন্যতম একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। আর সাবিত্রী দেবী লাভ করেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর শিরোপা। ১৯৮৭ সালে তিনি জাপানে গিয়ে পেবেৎ ও মেমোইর্স অফ আফ্রিকা মঞ্চস্থ করেন। ঢাকায় আসেন নাটক মঞ্চস্থ করতে।
২০০৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী দেয়। এ-সময়েই তিনি ইম্ফল শহরের অদূরে লাঙ্গোল লৈমনায় গড়ে তুলেন কলাক্ষেত্র কমপ্লেক্স। সেখানে নাট্য-বিষয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। হল্যান্ডের বিশিষ্ট নাট্য পরিচালিকা শ্রীমতী ইভেলিয়েন পুলেনস কলাক্ষেত্রে এসে তার কাছে নাটকের তালিম নেন।
চলচ্চিত্রেও নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন কানহাইলাল। তার বিখ্যাত নাটক পেবেৎকে ভিত্তি করে ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। যা ১৯৮৫ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত স্বল্প-দৈর্ঘ্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ স্বল্প-দৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
২০০৭ সালে আমেরিকার ব্ল্যাকওয়েল পাবলিশিং হাউজ কর্তৃক প্রকাশিত থিয়েটার ইন থিয়োরি ১৯০০-২০০০ সংকলন গ্রšে’ কানহাইলালের প্রবন্ধ রিচুয়াল থিয়েটার প্রকাশিত হয়।
২০১০ সালে তিনি মর্যাদাপূর্ণ সম্মান ভারতের সঙ্গীত নাটক অ্যাকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। এই বিরল সম্মান উত্তর পূর্বা ল থেকে এর আগে শুধু পেয়েছেন ভুপেন হাজারিকা ও মণিপুরের বিশিষ্ট প-িত প্রয়াত নিংথৌখোংজম খেলচন্দ্র। ২০১৬ সালে ভারত সরকার কানহাইলালকে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে।
নানা প্রতিকূলতার ভেতর জীবন কাটিয়েও কানহাইলাল পনেরোটি নাটক লিখেছেন এবং পয়ত্রিশটিরও বেশি নাটক পরিচালনা করেছেন। নাটক নিয়ে করেছেন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ইম্ফলের বিখ্যাত ইমা কেইথেলের বাজারের ১০০ জন সবজি, মাছ, কাপড় বিক্রেতা ইমাকে তালিম দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন নুপীলাল (নারী বিদ্রোহ) নাটকে। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মণিপুর থেকে ব্যাপকভাবে চাল বাইরে পাচার হয়ে যাওয়ার ফলে মনিপুরে চালের আকাল দেখা দিয়েছিল। রাজ্যে সৃষ্টি হয়েছিল চরম খাদ্য সংকট। তখন মণিপুরের নারীরা বিদ্রোহ করে। সেই কাহিনী নিয়েই আবর্তিত ছিল নাটকটি।
অভিনেত্রী হিসেবে সাবিত্রী দেবী যে-দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন সেটা অবিস্মরণীয় হয়ে আছে এবং সত্যিকার অর্থেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলন দমনের নামে নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচারের ঘটনাকে ভিত্তি করে লেখা মহাশ্বেতা দেবীর গল্প দ্রৌপদী কানহাইলালকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি এই গল্পের নাট্যরূপ নিয়ে ২০০০ সালে ইম্ফলে প্রথম দ্রৌপদী নাটক মঞ্চস্থ করেন। এ নাটকে সিনিয়র দ্রৌপদী চরিত্রে সাবিত্রী দেবী দুর্ধর্ষ অভিনয় করেন। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বন্দী নকশাল নেত্রী তাদের যৌন নির্যাতনে অতীষ্ঠ হয়ে গায়ের কাপড় ছুঁড়ে ফেলে নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। চরম প্রতিবাদের এই হৃদয়-বিদারক দৃশ্য সাবিত্রী দেবী দুঃসাহসের সঙ্গে মে উপস্থাপন করেন। মে এই দৃশ্য দেখে মণিপুরের তথাকথিত নারীবাদীরা সেদিন প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল। ইম্ফলে আর এই নাটক মঞ্চস্থ করার মতো অবস্থা ছিল না। কিন্তু থিয়েটারে উৎসর্গীকৃত কানহাইলাল ও সাবিত্রী দেবী তাদের সৃষ্টিতে অনড় থাকেন। কোনো চাপের কাছেই নত হননি। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাইসহ বিভিন্ন জায়গায় দ্রৌপদী মঞ্চস্থ করে যান।
ইতিমধ্যে ২০০৪ সালে উগ্রপš’ী দমনের নামে মণিপুরের নিষ্পাপ মেয়ে মনোরামাকে একদল আসাম রাইফেলস বাহিনীর সদস্য বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে তার নিথর দেহ নির্জন স্থানে ফেলে রেখে চলে যায়। এর প্রতিবাদে আসাম রাইফেলস বাহিনীর হেড কোয়ার্টার কাংলার প্রধান ফটকের সামনে মনিপুরের মায়েরা নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ জানান। আগামদর্শী শিল্পী কানহাইলাল যেন আগেই অনুভব করতে পেরেছিলেন কী ঘটতে চলেছে মণিপুরে।
মনোরমা-কা- নিয়ে মায়েদের এই যে দুঃসাহসিক প্রতিবাদ- যা সারা বিশ্বের মানুষের বিবেককেই নাড়া দিয়েছে প্রবলভাবে- এ বিষয়টি নিয়েও একটি নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন কানহাইলাল। এতে ইমা কেইথেলের এক পাগলিনির ভূমিকায় সাবিত্রী দেবী অসাধারণ অভিনয় করেন।
এই যে নাটকের সঙ্গে জীবনের সংগ্রাম এবং সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা, এই বৈশিষ্ট্যই কানহাইলালকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য এক উচ্চতায়। তিনি মণিপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম ইমাথেল-এর রাখালদের সংগঠিত করে মঞ্চস্থ করিয়েছেন শঞ্জেন্নাহা (রাখাল বালক) নামের এক নাটক।
চুড়াচান্দপুর জেলার পাইতে উপজাতি অধ্যুষিত গ্রামে শিবির গেড়ে তাদের নিয়ে নাট্য-কর্মশালা করে তাদের লোককথা নিয়েই করেছেন নাট্য ম ায়ন।
মণিপুরের বাইরেও আসাম এবং ত্রিপুরাতে ছিল তার এ-রকম কর্ম-বিস্তৃতি। আসামের গোয়ালপাড়া জেলার অন্তর্গত রাভা উপজাতি অধ্যুষিত রামপুরে ধারাবাহিকভাবে বছরের পর বছর নাট্য-কর্মশালা ও নাট্য ম ায়নের মাধ্যমে সেখানকার বেশ কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে তিনি জাতীয় স্তরে তুলে দিয়েছেন।
এ কে শেরামদার কাছে কানহাইলালের কথা শুনতে শুনতে আমরা কখন যে মণিপুরের পার্লামেন্ট ভবন মনিপুর বিধান সভার সামনে এসে পড়ি টেরই পাইনি। অবাক হয়ে দেখলাম, অমরজিৎ বিধান সভার ভেতরের রাস্তায় কারটি ঢুকিয়ে দিয়েছে। পুলিশ মিলিটারি কেউ আমাদের গাড়িটিকে আটকালো না। এত সুরক্ষার চাদর দিয়ে মুড়ানো ইম্ফল, জায়গায় জায়গায় আসাম রাইফেলস-এর পাহারাদারি, সেখানে কেন আমাদের মতো চারজন ভিনদেশি মানুষ অনায়াসেই এই গুরুত্বপূর্ণ ভবনে ঢোকার সুযোগ পেলাম? একটু ধন্দ লাগারই কথা। কারণটা বুঝলাম ভেতরে যাওয়ার পর। বিধান সভা ভবনের একেবারে সামনে আমাদের কার থেকে নামিয়ে ছবি তুলতে তুলতে থাঙা তংব্রাম অমরজিৎ জানালেন, তিনি এই মণিপুর বিধান সভায় চাকরি করেন, ট্রান্সলেটর পোস্টে। আমরা আরেকবার একই সঙ্গে বিস্মিত এবং চমৎকৃত হই। থাঙ্গা তংব্রাম অমরজিৎ আমাদেরকে একের পর এক বিস্ময় উপহার দিয়েই চলেছে!
তখনই মেঘলা ভাব কাটিয়ে শেষ বিকেলের রোদে ঝলমলিয়ে উঠলো যেন পুরো ইম্ফলই। আমরা যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম বিধান সভা ভবনের কাছে, সেখান থেকে চারদিকের অনেক দূর দূর প্রান্ত চোখে পড়ছিল। আমরা গিয়ে দাঁড়াই অতিথি সেবা-র সামনে। এটি একটি চমৎকার দারুণ আকর্ষণীয় স্ট্যাচু। কালো পাথরে নির্মিত একজোড়া নারী-পুরুষ। নারীটি দাঁড়ানো। কলসিটা নামিয়ে ঢেলে দিচ্ছে পানি। আর পুরুষটি বসে মেলে দিয়েছে অঞ্জলি পানি-পানের জন্য। চমৎকার ফিনিশিংয়ের একটি নিখুঁত শিল্পকর্ম। বিষয়ব¯‘ও চমৎকার। এ শুধু চিরন্তন নারী-পুরুষের একজনের ওপর আরেকজনের নির্ভরতার ছবি নয়, অতিথিদের প্রতি মণিপুরীদের সেবার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতীকী-চিত্রও।
বিধান সভা ভবনের বাইরে বেশ কিছুক্ষণ অলস সময় কাটিয়ে আমরা যখন হোটেল-রুমে ফিরে আসি, তখন সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয়েছে। কিন্তু হাজার হলেও ইম্ফল শহর, সেখানে এই অন্ধকার তেমন দৃশ্যমান নয়। বিভিন্ন আলো জ্বলছে। গাড়ির লাইটের ঝলক তো আছেই। রাতে ইম্ফল রেডিওর দুজন সাংবাদিক এলো। আমাদের চার বাংলাদেশি কবির সাক্ষাৎকার নিতে। তারপর দেখা করে গেলেন ইন্দো বাংলা পয়েটস মিট-এর প্রাণপুরুষ কবি শারতচান্দ থিয়াম। রতন থিয়ামের কোরাস রেপার্টরি দেখার আয়োজনের জন্য তাকে অকুন্ঠ ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানালাম। সেই সঙ্গে জানতে চাইলাম আমি কী রতন থিয়ামের কোনো বাংলা কবিতার বই ইম্ফল থেকে সংগ্রহ করতে পারবো? কোনো বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে সে-বই? তিনি আশ্বস্ত করলেন পাওয়া যাবে। তারপর হাতের ছোট্ট ঝুড়ি থেকে বের করে একটা সবুজ রংয়ের ফল তুলে দিলেন আমার হাতে। বললেন, এটার নাম থামচেট। শরীরের জন্য খুব ভালো। বিশেষ করে হার্টের জন্য উপকারী। ফলটি আমি গতকাল এখানে আসা অবধিই দেখতে পাচ্ছি। ইম্ফলের রাস্তায় বাজারে বাজারে। বিশাল সাইজ। মুঠোয় ধরতে চায় না। সামনের দিকটায় বেশ কয়েকটি বড় বড় গোটার মতো ফুলে আছে। প্রতিটি গোটার ভেতরে আছে দানা। সেটাই খেতে হয়।
শারতচান্দ থিয়াম নিজেই একটা দানা বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গেই ওটা মুখে দিয়ে চেনা কোনো একটা স্বাদে হারিয়ে গেলাম। একটু জলজ একটু পানসে টাইপের স্বাদ। কোথায় যেন পেয়েছি এই স্বাদের আস্বাদ? কোথায়? ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ আমার মনে পড়ে যায়, প্রথম যৌবনে, যখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন, হ্যা হ্যা তখন- সে বড় তমস-কাল ছিল আমার। আমি ছিলাম বোবা। হ্যা, বোবাই তো। কথা তো আমি বলতে পারতাম সেই ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু প্রাণের কথা, রসের কথা, প্রাণ ভরমিয়া বলা যাকে বোঝায়- সে আমার জবানে কিছুতেই আসতো না। কেন আসতো না সেও আমার জানা আছে। সেটা আমি কোনোকালে কাউকেই বলবো না। বলাটা সঙ্গতও নয়।
এর ওর কথার জবাবে আমি শুধু হা হু করতাম, ক্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু একটা যে মোক্ষম জবাব দেওয়া, সেটা আমার দ্বারা কিছুতেই সম্ভব হতো না। আর যে-কিনা কথায় এমন চৌকস হতে না পারে, তাকে কি কেউ ভালোবাসে? পারে ভালোবাসতে? হতে পারে বোবার কোনো শক্র নাই, নিষ্ঠুর সত্য হলো বোবার কোনো ভালোবাসার মানুষও থাকে না। ভালোবাসার মানুষ যে কথাও শুনতে চায়। আমার ক্যাম্পাস লাইফটা তাই বড়ই তিক্ত ছিল। যে-বয়সে আমার চোখের সামনে ক্লাসমেটরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা সঙ্গীর হাত ধরে হাঁটে, রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হলের সামনে বসে ফুচকা খায়, বকুলতলায় বসে ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকে- সেই বয়সে আমি একলা একলা সোহরায়ার্দি উদ্যানে একা একা বসে বাদাম খাই। ভালো তো কতজনরে লাগে। লাগতো না? কিন্তু আলাভোলারে ভালো লাগতো কার? সাহস করে যে দুইটা মিঠা কথা বলে পরাণটা ভুলিয়ে দেব- সে যোগ্যতা আমার সামান্যও ছিল না। তাই মনের দুঃখে কখনো কমলাপুর রেলস্টেশন, কখনো সদরঘাট ল টার্মিনাল, কখনো ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড কখনো বা এয়ারপোর্টে গিয়ে বসে থাকতাম। কী করবো? ট্রেনে-প্লেনে-লে -বাসে চড়ে যে দূরের কোনো বনবাসে গিয়ে বুকের দুঃখ হালকা করে আসবো- সে ক্ষমতাও ছিল না। পকেট যে থাকতো গড়ের মাঠ। কিন্তু একবার কী হলো, কষ্টের ডোজটা বুঝি একটু বেশিই পড়েছিল, আর পকেটেও ছিল বাড়তি টাকা! আমি আর বাসস্টেশন থেকে ফেরত আসতে পারলাম না। সুনামগঞ্জের বাসে উঠে বসলাম। সুনামগঞ্জ বাসস্টেশনের কাছে হোটেল নূর-এর কাটাতে লাগলাম দিনের পর দিন। কিছুতেই আর ঢাকা শহরে ফেরত যাবো না- এমনই একটা ধনুর্ভঙ্গ পণ আমার। সুনামগঞ্জের সময়ও খুব একটা খারাপ কাটছিল না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কোনো একদিকে ছুটে যেতাম। তো, এক সকালবেলা হাঁটতে হাঁটতে সুনামগঞ্জ শহর ছাড়িয়ে বাইরের এক নির্জন জনপদে হাজির হলাম। সরু পথ, চারপাশে বর্ষার পানি, শেষ প্রান্তে বিখ্যাত এক পুকুর, যার পাড় জুড়ে শত রকমেরর গাছপালা। সেই গাছপালার টানে বিকেলবেলা নাকি এখানে মানুষের হাট বসে। তো, আমি সেই পুকুরপারে একটা চক্কর মেরে বেরিয়ে আসতেই দুই সুন্দরী তরুণীর সঙ্গে দেখা। ওদের একজন আমাকে দেখে কথা বলায় বেশ আগ্রহী হয়ে উঠলো। এতো সকালবেলা আমি কে, কোথা থেকে এলাম এখানে, কী নামধাম কত রকম জিজ্ঞাসা। কথা বলতে বলতে আমরা তিনজন সেই বর্ষার জলাভূমির পাশেই বসে পড়লাম।
ওরা ছিল দুই বোন। বড়জনের নাম সুরমা, ছোটজনের নাম আয়না। তো, আয়নাও তখন অনেক কথার রঙধনু রাঙিয়ে ছিল। হঠাৎ সেই মেয়েটা করলো কীনা, ‘আপা! মেহমান আসছে তারে কী খাওয়াই’ বলেই ‘আপা তোমরা বসো’ বলেই ঝাপিয়ে পড়লো বর্ষার সেই জলাভূমিতে। সেখানে সেই জলভরা ক্ষেতের মধ্যে কতো শাপলা শালুক গুল্মলতা। আয়না সেখানে ডুব দেয় আর কী জানি হাতায়। কী যেন হাতায় আর ডুব দেয়। শেষে কী একটা ব¯‘ নিয়ে জলভেজা শরীরে উঠে আসে টানে। আমার হাতে একটা ফলের মতো জিনিস ধরিয়ে দিয়ে বললো, নেন। আপনারে তো চা-নাস্তা কিছু খাওয়াতে পারলাম না, ঢ্যাপা খান। আমিতো অভিভূত। কিন্তু যে ব্যক্তি কথায় চৌকস হয় না, সে কি সহজে ঢ্যাপার খোলস খুলতে পারে? শেষে সেই আয়নাই আমার হাত থেকে টান দিয়ে ঢ্যাপাটা নিয়ে তার খোলস খুলে দিল। ভেতরে লাল না বেগুনি টাইপের ছোট ছোট গুড়ি গুড়ি দানা। আমি আপনমনে মুখে দিই আর চিবাই। খেতে খেতেই হঠাৎ আয়নার দিকে অবাক চোখে তাকাই। মেয়েটির পুরো শরীর জলেভেজা। শাড়ি ব্লাউজ ফুঁড়ে শরীর বেশ রোদের মতো চিরিক মেরে জেগে উঠতে চাইছে। আমার সেই তাকানো দেখেই কিনা মেয়েটা, আপা তুই গল্প কর বলে সুরমাকে রেখেই দৌড়ে দৌড়ে বুঝি ওদের বাড়ির উদ্দেশে ছুটে যেতে লাগলো। সুরমাও কি আর একা একা আমার মতো একজন জোয়ান মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? সেও বোনকে ধরার জন্যই যেন দ্রুত পায়ে আমার সামনে থেকে অন্তর্হিত হলো। আমি ততক্ষণে ঢ্যাপার রসে আচ্ছন্ন হয়ে আছি। পানসে একটা স্বাদ হলে কী হবে, তার ভেতরে যেন অমৃত লুকানো। একটা মেয়ে কত কষ্ট করে জল সেচে সেচে আমার জন্য তুলে এনেছে! সেই ঢ্যাপা খেতে খেতে হঠাৎ আমার মন থেকে সব আক্ষেপ, কষ্ট, হতাশা দূর হয়ে যায়। ঝটিতি মনে পড়ে- আমার না ক্লাস চলতেছে? ইসসিরে কতদিন আমার ক্লাস করা হয় না। আমিও দ্রুত বেগে ঢাকার বাস ধরার জন্য হোটেল নূরের উদ্দেশে হাঁটতে থাকি।
এতদিন পর আমি আবার সেই ঢ্যাপার রসের স্বাদ খুঁজে পেলাম এই থামচেটে। অবিকল একই স্বাদ একই ঘ্রাণ। কবি শারতচান্দ থিয়াম আরো জানালেন, এটি নীল পদ্মের ফল। শুনে আরো মনটা ভরে উঠলো।
ইম্ফলের দ্বিতীয় রাতটাও প্রায় ঘুমহীনই কাটে। এটা যে শুধু নতুন জায়গায় আসার প্রভাব, তা নয়, আসলে আমার অভ্যেসটিই হয়ে গিয়েছে, ঘুমহীন রাত কাটানোর। ঘুম আসে আমার সকালের পর থেকে। সকাল থেকে দুপুর অব্দি। আমি এখন চাকরি করি না বলে বাসায় কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু যেহেতু আমি বাইরে এসেছি, আমাকে সকাল সকাল উঠতে হবে, শিডিউল মতো চলতে হবে। সেখানেই আমার সংঘর্ষ হচ্ছে ঘুমের সঙ্গে। তার মধ্যে আজকের দিনটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা অংশ নেব ইন্দো বাংলা পয়েটস মিট কবিতা উৎসবে। আজ কবিতা উৎসবের দিন কী পথে খাওয়া যায়? এ কে শেরামদা সাচ্চা কবিই বলতে হবে। সকাল যখন একটু রোদে ভারিক্কী চাল পেল, তখনই তিনি আমাদের তিনজনকে নিয়ে নাস্তা খেতে বেরোলেন। ইম্ফলের হোটেল রেস্তোরাঁগুলো ধীরে ধীরে খোলে। বিশেষ করে বেলা দশটার পর থেকে জমে উঠতে থাকে। সে-কারণেই আমাদের দেরিতে বেরোনো। শেরামদার প্ল্যান ভাত খাওয়ার, যাতে দুপুরবেলা আর না খেতে হয়, আমাদেরকে তো বেলা বারোটার মধ্যেই বেরিয়ে যেতে হবে কবিতা উৎসব-মে ।
আমরা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়াই। ফুটপাতের ওপর এক ভদ্রমহিলা আমার চিরচেনা কলাপাতা ভাঁজ করে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে রেখেছে বিক্রয়ের জন্য। কলাপাতা দেখে আমি আবার স্মৃতিকাতর হয়ে উঠি। ছোটবেলায় কলাপাতায় যে কতোবার খাওয়া হয়েছে, তার কোনো হিসেব নেই। সেসব মজার খাওয়ার স্মৃতি কখনো ভোলা যাবে না। আমি ছিলাম খুব আখুকা। মজাদার খাবারের খোঁজ পেলেই হলো সেখানে জুটে যেতে দেরি হতো না। শুক্রবার আমাদের বাড়ির সামনেই জুম্মাঘরের জুম্মার নামাজের পর খিচুড়ি খাওয়া যেত। মিস নাই। কোনো না কোনো বাড়ি থেকে কেউ না কেউ ডিশ ভরে নিয়ে আসতো খিঁচুড়ি। মানতের। নামাজটা শেষ হওয়ামাত্র আমরা সব পোলাপানের দল দৌড়ে গিয়ে বসে যেতাম জুম্মাঘরের সামনে লাইন দিয়ে। ফকির মিসকিনরা যেভাবে বসে অবিকল তেমনভাবেই। তারপর কোনো একজন আমাদের সবার সামনে রেখে যেতো কলাপাতা। বেশ বড় সাইজের কলাপাতা। আমরা সেই কলাপাতাটা সামনে নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতাম, কখন এক চামচ খিঁচুড়ি দিয়ে যায়। অবশেষে কোনো শুক্রবার হয়তো মস্তান খাঁ চাচা আবার কোনো শুক্রবার হয়তো লতিফ খাঁ ভাইয়ের বাবা আমাদের কলাপাতায় এক চামচ খিঁচুড়ি, চামচ থেকে পড়ে কী পড়ে না, অতি কষ্টে রেখে যেতেন। আমরা কলাপাতা চেটেপুটে সেই খিঁচুড়িটুকুই মজা করে খেতাম। আহা! একেক শুক্রবারের খিঁচুড়ির টেস্ট একেক রকম।
কলাপাতায় কী শুধু খিঁচুড়িই খেতাম? খরচের খাওয়াও যে কতো মজার ছিল! ড্যাগের গরুর মাংসই হউক আর খাশির মাংস, গরম গরম ভাতের সঙ্গে খাও আর ঝালে উশ আশ করো। তবে খেলাটা জমে যেত যখন আলফু পলানের কোনো এক ছেলে আইচা ভরে ঢেলে দিয়ে যেত মাসকলাইয়ের ডাল, তখন হতো এক লাফালাফি কা-! ডাল একবার যদি ডানদিকে দৌড়ায় তো সেদিকের কলাপাতা উচিয়ে ধরলে আবার দেখো তীব্র বেগে ছুটে যাচ্ছে পশ্চিম সীমানায়। আবার সে সীমানার কলাপাতা ধরো উঁচিয়ে। তখন হয়তো বাচ্চু ভাই সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছেন, তাড়াতাড়ি চুমুক দে! চুমুক দে! আরে বাবা! চুমুকটা দেব কীভাবে- সেটা কিন্তু আর বলছে না। সেই কলাপাতায় খাওয়াটা আমাদের গ্রাম থেকে এক-রকম উঠেই গেছে বলা যায়। শুক্রবারে বোধ হয় গ্রামের মসজিদে এখন আর খিঁচুড়ি আসে না। খরচ হলে এখন আগে আগে চলে আসে ডেকোরেটর। শৈশবের সেই কলাপাতা এখনো কতো আদরে ফুটপাতে বসে বিক্রি করেছেন এক নারী। শেরামদার কাছে জানা গেল, এটা কোনো পুজা অর্চনায় ব্যবহার হবে কোনো মন্দিরে।
গতকাল দুপুরবেলা লোকতাক লেকে কবি থাঙ্গা তংব্রাম অমরজিতের বাড়িতে যেভাবে খেয়েছিলাম, আজো ঠিক সেভাবেই আমাদেরকে খাবার পরিবেশন করা হলো। বোঝাই যাচ্ছে, এটাই মণিপুরী অতিথিপরায়ণতার রীতি। ভাতের প্লেটের চারদিকে নানা পদের ভর্তা, মাছ, তরকারি, ডালের এক একটা পদ। তবে আমি এখনো মণিপুরী খাবারে অভ্যস্ত হতে পারিনি। এ কে শেরামদা বললেন, আমারো প্রথম প্রথম এ-রকম হতো। ধীরে ধীরে সয়ে যাবে।