করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৭ বর্ষ ৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৪

লেখক-সংবাদ :





নতুন বইয়ের গন্ধে ৮ লেখক

বাংলাদেশে বইয়ের বড় বাজার ও প্রচারকেন্দ্র অমর একুশে বইমেলা, যেটি মাসব্যাপী আয়োজিত হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলিয়ে। বাংলামাটিতে এ লেখা যখন আপলোড হচ্ছে তখন মাঘের হিমহিম হওয়াকে তোয়াক্কা না করে দিনরাত স্টল নির্মাণ কাজ শেষ করার তোড়জোড় চলছে। ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলামাটিরও মেলাকেন্দ্রীক আয়োজন থাকবে, যার প্রথম পর্ব বলা যায় এ লেখাকে।

খালিকুজ্জামান ইলিয়াস: দেশে যে কজন অনুবাদক নিরলস নির্ভুল ও স্বাদু অনুবাদের জন্য পাঠকের নির্ভরতার প্রতীক হয় উঠেছেন তাঁদের ভেতর, বলা যায় সেই অতি অল্পসংখ্যকের ভেতর, খালিকুজ্জামান ইলিয়াস একেবারে শীর্ষ অবস্থানে আছেন। বাংলাদেশে বিশ্বসাহিত্য অনুবাদ কিংবা বিশ্লেষণে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন প্রধানত ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক কিংবা ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর শিক্ষা যাঁরা গ্রহণ করেছেন তাঁরাই। বাংলা ভাষায় ইলিয়াসের হাত ধরেই লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার কথাসাহিত্যের অভিষেক ও বিস্তার ঘটেছে, অত্যুক্তির মতো শোনালেও এটিই বাস্তবতা। গ্রীক সাহিত্যের বিষয়েও কি একই কথা বলা যাবে না? বিংশ শতাব্দীর মনুমেন্টাল ওয়ার্ক হলো নিকোস কাজানজাকিসের ওডেসি অ্যা মডার্ন সিক্যুয়্যাল। হোমারের ওডিসি মহাকাব্যের কথা কোন সচেতন লেখকই না জানেন। হোমার যেখানে শেষ করেছেন, কাজানজাকিস সেখান থেকে শুরু করেছেন। ফ্রিভার্সে লেখা এ মহাকাব্য হোমারেরটার তিন গুণ বড়। লিখেছেন ১২ বছর ধরে। আনন্দের কথা, ইলিয়াস এটির অনুবাদকর্মে হাত দিয়েছেন, কাজ শেষ করতে দুবছর তো লাগবেই।
আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে, দেশের অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর অগ্রজ। অকালপ্রয়াণ না ঘটলে তাঁর কাছ থেকে আমরা আরও দুয়েকটি মাস্টারপিস নিশ্চয়ই পেতাম। ভেবে দেখলাম, উত্তরায় বসবাসের সূত্রে ছোট ভাইয়ের নিকট প্রতিবেশি আমি কুড়ি বছর ধরে। অপরদিকে বড় ভাইয়ের প্রতিবেশি হয়েছিলাম আশির দশকের শেষদিকে। মহানগরীর দক্ষিণ প্রান্তে ছিল তাঁর বাস। তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে কোনো কোনো সময় মধ্যরাত হয়ে যেত। চিনুয়া আচেবে সম্পর্কে খালিকুজ্জামান বলছিলেন আমার টিভি অনুষ্ঠানে (বিশ্বসাহিত্য: নিসর্গ ও নক্ষত্র), ওই নোবেলজয়ী লেখকের সঙ্গে তুলনা টেনেছিলেন তিন বড় ভাইয়ের কথাসাহিত্যের। সে যাক। কথাচ্ছলে এলো তাঁর প্রসঙ্গ। আসল কথায় ফিরি। খালিকুজ্জামানের যে বইটি একটু দেরি করেই বইমেলায় আসছে সেটি হলো রোমান সাম্রাজ্যের সর্বশেষ সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ মেডিটেশন। এটি দার্শনিক রাজার চিন্তাভাবনার নির্যাস। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে বইটি আসছে।

পাপড়ি রহমান: সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন কালি-র কর্ণধার তিনি। ঐকান্তিক নিষ্ঠার সঙ্গেই গল্প-উপন্যাস লিখে চলেছেন। পাপড়ির কোনো কোনো উপন্যাস এত ঢাউশ যে তার আকারই রীতিমতো সমীহ জাগায়। শত-হাজার পৃষ্ঠা লিখে যাওয়া কী বিপুল শ্রম আর মনোনিবেশ দাবী করে সেটি অলেখকরা কী করে বুঝবেন! পাপড়ি নাম কে দিয়েছিল জানা হয়নি, তবে লেখায় যে তিনি মানে পাপড়ি পাপড়ি মেলতে চান নানা রূপ-রস-সৌরভে, এ বিষয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। ব্যক্তিজীবনে পুষ্পপ্রেমী তিনি, সত্যি বলছি, ফুলের মতো অপরূপা দুটি কন্যাও রয়েছে তাঁর। তাঁর নতুন যে যমজ সন্তানের মুখ আমরা দেখবো গ্রন্থের উদ্যানে তা হলো: গল্পগ্রন্থ হেমন্তের দিনে, উপন্যাস ঊষর দিন ধূসর রাত; উপন্যাসের বিরতি অর্ধযুগ, গল্পগ্রন্থের বিরতি অর্ধ দশক। বললাম, বই দুটোর নাম শুনে কে বলবে কাব্যগ্রন্থের নাম নয়! শুনে হাসির ঝংকার তুললেন। হাসি না থামা পর্যন্ত চুপ থাকলাম। শেষে বললাম, পাপড়ি, আপনি কবি না তো!

সাজ্জাদ শরিফ: আমরা তখন একেবারে নবীন, কম্পাস নামে ছোটকাগজের একটি সংখ্যা গ্রন্থালোচনা দিয়ে সাজাবো, এমন পরিকল্পনা আঁটলাম। সাজ্জাদ সম্মত হলেন শামসুর রাহমানের সদ্য প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ নিয়ে লিখতে, মাযহারও নতুন একটি বই নিয়ে আলোচনা লিখে দেবেন বলে জানালেন। তখন বিচিত্রায় শামসুর রাহমানের কক্ষে আমার নিত্য যাতায়াত। কম্পাসের ওই সংখ্যাটি পড়ার পর মৃদুস্বরে কিন্তু তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন কবি। সাজ্জাদের সমালোচনা সেই আশির দশকের প্রথমার্ধেই লেখকদের সচকিত করেছিল। তাঁর কবিতাও ছিল অন্যরকম। ওই দশকেরই একেবারে শেষদিকে আমার অনুরোধে সাজ্জাদ প্রথম বড় কাগজে কবিতা ছাপতে দিলেন। নিউজপ্রিন্টে বলপয়েন্টে সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা কবিতা। শামসুর রাহমানের হাতে দিলাম কবিতাটি। তখন আমরা সাপ্তাহিক মূলধারা করি। কবি শামসুর রাহমান প্রধান সম্পাদক, মালিক সাবের হোসেন চৌধুরী। সে এক দিন গেছে বটে। প্রথম থেকেই সাজ্জাদের লেখা আমার ভালো লাগতো। সাজ্জাদের সাহিত্যিক সত্তার সমান্তরালে সম্পদকসত্তা প্রবলভাবে সক্রিয়। তাঁর সম্পাদনায় প্রথমা প্রকাশন থেকে যে বইটি মেলায় আসছে তার নাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাক্ষ্য।
মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেয়ে বড় কোনো ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর নেই। এ অভ্যুত্থানের নায়ক তরুণ ছাত্রছাত্রী এবং সর্বস্তরের জনতা। এই আন্দোলন চলেছে রক্তাক্ত রাজপথে। আর এর শক্তি ছিল তরুণদের নতুন সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির মধ্যে স্লোগানে, কার্টুনে, পোস্টারে, গান ও র্যাপে, গ্রাফিতিতে। নানা ক্ষেত্র থেকে রাজপথে ও সংস্কৃতির আঙিনায় যাঁরা এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন, এ বই তাঁদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য। এ সাক্ষ্য নির্বাচিত, কিন্তু প্রতিনিধিত্বমূলক। এ বই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক তৎপরতারও এক নথি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে বোঝার জন্য  বইটি গুরুত্বপূর্ণ হবে, আশা করি ।

আফসানা বেগম: মালয়েশিয়ায় বসবাস তখন আফসানার। একবার ঈদের আগে-আগে শুধালাম- ওখানকার ঈদ কেমন, ঈদের দিন আপনার কেমন কাটে, এইসব নিয়ে লিখুন না বাংলামাটিতে। ঝরঝর লিখে দিলেন। বুঝলাম, লেখা তাঁর প্যাশন। ফরাসী লেখক প্যাত্রিক মোদিয়ানো নোবেল পেলেন ২০১৪ সালে। মোদিয়ানো সম্পর্কে মাইকেল উডের একটা লেখা দিয়ে অনুরোধ করলাম অনুবাদ করে দিতে, সময় বড্ডো কম। তখন অক্টোবর মাসে বাংলামাটির ধরাবাঁধা নিয়ম ছিল নোবেল ও বুকার প্রাইজ পাওয়া দুই লেখককে নিয়ে বিশেষ আয়োজন করা। দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতা বেরুনোর আগে বাংলামাটিতে আপলোড হয়ে যেতো সে সব লেখা। আফসানা চটজলদি অনুবাদ করে দিলেন। মানলাম তাঁর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় রয়েছে। ভেতরে ভেতের যে তিনি পাক্কা কথাকার হয়ে উঠছেন, এটি টের পেতে আমার সময় লাগলো। চমকে গেলাম অটিস্টিক শিশুর মায়ের সংগ্রাম নিয়ে উপন্যাস প্রকাশ হতে দেখে। তাঁর বিষয় নির্বাচন এবং সাহিত্য-বার্তা বিষয়ে কিছুটা ধারণা হলো।
আফসানা বেগমের দুটো নতুন বই আসছে মেলায়। উপন্যাস ঘরের দিকে যাওয়া প্রথমা থেকে। গল্পের বই অন্তরালের ঘোরে কথাপ্রকাশ থেকে। এ ছাড়া নাদিন গোর্ডিমারের জাম্প অ্যান্ড দ্য আদার স্টোরিজ-এর অনুবাদের নতুন সংস্করণ হচ্ছে কথাপ্রকাশ থেকে।

আহমাদ মাযহার: তিনি থাকেন এখন নিউইয়র্কে, হঠাৎ একদিন ঢাকা ছেড়ে যান, টেরই পাইনি। তবে তিনি যে একরত্তিও বদলাননি মার্কিন মুল্লুকে গিয়ে, তার প্রমাণ ফি বছরই পাচ্ছেন বন্ধুরা। প্রত্যেক বছরই দেশে আসেন ফেব্রুয়ারির বইমেলা শুরু হলে। বইমেলা শেষে আবার উড়াল দেন। এবারও মিস হবে না। এ থেকেই বোঝা যায় তিনি আপাদমস্তক বইপ্রেমী এবং লেখক। প্রবাসযাপনে অনেক লেখক অনুর্বর হয়ে পড়েন, মাযহার দারুণ ব্যতিক্রম। তিনি দেশে থাকতে যে পরিমাণ ও যে ধরনের এবং আঙ্গিকের লেখা লিখতেন, বিদেশে গিয়ে সর্বঅর্থেই তার বিস্তার ও বিকাশ হয়েছে, বিচিত্র ধরনের বই বেরুচ্ছে তাঁর। সেই ঢাকা কলেজে পড়ার সময় আমরা দুজন বন্ধু হয়ে উঠি, সেই বন্ধুত্বে কোনো ছেদ পড়েনি। শিশুসাহিত্য দিয়ে শুরু মাযহারের, এখন প্রবন্ধই লেখেন বেশি। এবার মেলায় আসছে তাঁর যুগল প্রবন্ধগ্রন্থ: সংগতি অসংগতির তৃষ্ণা (খড়িমাটি থেকে), বিচ্ছুরণের বৃত্ত (পুণ্ড্র প্রকাশন)। নাম দুটি ভারি পছন্দ হয়েছে আমার। বলা দরকার, নতুন সংস্করণ আসছে একটি- ছড়াতত্ত্ব ছড়াশিল্প।

শাহনাজ মুন্নী: সরকার আমিন-শাহনাজ মুন্নী জুটিকে দেখছি আশির দশক থেকে, তখনও উভয়ের কোনো বই বের হয়নি। প্রেমে ও কবিতায় সমর্পিত দুজন। ব্যতিক্রমী উচ্চারণের জন্যে দুজনেই পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। মুন্নী প্রিন্ট মিডিয়া ছেড়ে সাইমন ড্রিংয়ের তত্ত্বাবধানে একুশে টিভিতে সাংবাদিকতা করতে গেলেন। সেই শুরু, তারপর একে একে বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে কাজ করেছেন। আর কবিতার পাশাপাশি গল্প-উপন্যাস লেখায়ও বিপুলভাবে সংযুক্ত হলেন। বরং কবিতাই কম লেখা হচ্ছে। ঈদসংখ্যার জন্যে নিয়মিত উপন্যাস লিখতে লিখতে দস্তুরমতো কথাসাহিত্যিকই হয়ে গেলেন আমাদের এই কবি। ভাবছিলাম এইবার কি মুন্নীর কবিতার বই বের হবে। না। এবার বেরুচ্ছে গল্পগ্রন্থ- ১৭টি গল্পের সংগ্রহ প্রিজন ডিলাক্স ট্যুর। প্রকাশ করছে কথাপ্রকাশ।

ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী: ড. ফারসীম বুয়েটে পড়াচ্ছেন ২৫ বছর ধরে; ব্যতিক্রমী বইপ্রেমী। জীবনে বারবার বিপর্যয়ের মতো ঘটনা আছড়ে পড়েছে তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে, তবু সব সময় তাঁর মুখে অমলিন জগৎভোলানো হাসি। জহুরীর চোখে বই মাপেন, মনে হয় মেলার কোনো বই তাঁর নজর এড়িয়ে যায় না। মেলা শেষ না হতেই একটা র্দীঘ নির্বাচিত তালিকাও প্রকাশ করেন ফেসবুকে, যা ক্রেতা-পাঠকদের বেশ কাজে আসে। করোনার আগে তাঁর বাসভবন বনলতায় নিয়মিত বসতো লেখকদের আড্ডা বনলতা রিডিংস। আমাদের দেশে বিজ্ঞান নিয়ে লেখার মানুষ খুব কম। আর মজা করে, কবিতার মতো তুলনা উপমা মিষ্টতা দিয়ে লেখার লোক তিনিই একমাত্র কিনা সেটা আর কয়েক বছরের মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। এবারে অনুপম থেকে বেরুচ্ছে তাঁর নতুন বই শক্তি ও জ্বালানি: আধুনিক রূপরেখা। জ্ঞানকোষ থেকেও একটি প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হচ্ছে।

লায়লা ফারজানা: মনে হচ্ছে এই তো সেদিন, অথচ মাঝে চলে গেছে তিনটে বছর। ২০২২ সালের বইমেলায় একদিন লায়লা ফারজানার বই (ঝরা পাতার র্যাপসোডি) হাতে তুলে দেন বন্ধু প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক। তার প্রতিষ্ঠান মাওলা ব্রাদার্স খুবই বিখ্যাত। এখনও নতুন লেখকদের স্বপ্ন থাকে এখান থেকে একখানা বই প্রকাশের। ধ্রুব এষের করা প্রচ্ছদ দেখে প্রথমেই ভালো লাগা। পেছনের মলাটে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের আশীর্বাণী আর ভেতরের মুখবন্ধে কবি নির্মলেন্দু গুণের বয়ান। বইয়ের মার্কেটিংয়ের জন্য মন্দ নয়। অন্তত প্রথম কবিতার বইয়ের জন্য। বইয়ের নামেই শুধু নয়, অনেক কবিতাতেও ব্যবহৃত হয়েছে ইংরেজি শব্দ। অধ্যাপক সায়ীদ এটিকেই কবিতার ওপর পাথরের মতো চেপে বসা বলছেন। কবিতা পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছিল বুয়েট থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক এবং দীর্ঘ দুই দশক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের কারণে এইসব ইংরেজি শব্দ স্বাভাবিক-স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উঠে এসেছে কবিতায়, যেটিকে সচেতনভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে দেননি কবি। তরল, সহজিয়া, ভাবালুতা, প্রথাগত রোমান্টিসিজম- এইসব একরত্তি পাওয়া যাবে না লায়লা ফারজানার কবিতায়। কবিতার পাঠক হতে হলে সূক্ষ্ম রুচি, সংবেদনশীলতা আর আধুনিক শিক্ষাও যে জরুরি সেটি আমরা খুব একটা উচ্চারণ করি না। কোনো কবির প্রথম গ্রন্থের প্রথম কবিতা অবশ্যই সিগনিফিক্যান্ট বা তাৎপর্যপূর্ণ। এ থেকে কবিসত্তার গূঢ় পরিচয় পাওয়া সম্ভব। আর তাতে যদি মেলে বিমূর্ত চিত্রকল্প ও রহস্যময়তা, তবে আরও ভালো। মারকিউরি জোন-এর মতন কবিতা যার হাত দিয়ে বের হতে পারে তিনি বিলক্ষণ পাঠকদের আশান্বিত করেন। মেলায় মাহমুদের স্টলে পরিচয় হয়েছিল লায়লার সঙ্গে, পেশায় স্থপতি তিনি, নিউইয়র্কে বাংলা নাটকে অভিনয়ও করেন। মাঝে ২০২৩-২৪ দুবছর মেলার সময় দেশে আসতে পারেননি, তবে দুবছরই তার দুটি অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে একই প্রকাশনা সংস্থা থেকে। এর মধ্যে আমার নজর কাড়ে মার্কিন দেশের কবিতা। শত বছরের নির্বাচিত ২৫ আমেরিকান কবির একগুচ্ছ করে কবিতার অনুবাদ।
সে যাক, এবারে বইমেলায় প্রথম দিন থেকেই থাকবেন কবি, নতুন কবিতার বই নীল ইগুয়ানা যেদিনই আসুক না কেন। ভালো কথা, এবারও তাঁর অনূদিত গ্রন্থ আসছে, হুয়ান রুলফোর উপন্যাস পেদ্রো পারামো।

-----------
মারুফ রায়হান
২৫ জানুয়ারি ২০২৫









লেখা পাঠান, চিঠি লিখুন: [email protected]