করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





শার্লক হোমস মিউজিয়ামে
ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস এমন একটি চরিএ যে সে তার রচয়িতার চেয়ে অনেক বেশি পরিচিত ও জনপ্রিয় এবং সম্ভবত পৃথিবীতে একমাত্র কল্পিত চরিত্র যার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মিউজিয়াম। তো আমরা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল রচিত এবং কল্পিত চরিত্র শার্লক হোমস মিউজিয়াম দেখতে টিউব স্টেশন বেকার স্ট্রীটে নামলাম রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে।
লন্ডন শহরের এই মিউজিয়ামটি দেখতে যাওয়া যায় ট্রেন বাস বা টিউবে এবং টিউবে গেলে নাতে হবে রিজেন্ট পার্ক, মেরিলিবোন বা বেকার স্ট্র্রীট স্টেশনে। আমরা বেকার স্ট্রীট স্টেশনে নেমে এরপর ওপরে উঠে পেলাম স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের নয় ফুট দীর্ঘ ব্রোঞ্জ মূর্তি। অদূরে শার্লক হোমসের কৃষ্ণ মূর্তি, মিউজিয়ামের পাশে গিফট শপে পনেরো পাউন্ড দিয়ে টিকেট কেটে ঢোকার আগে-পরে অর্ভ্যথনা জানাল ডাঃ ওয়াটসন ও মিসেস হাডসন সাজা দুজন শ্বেতাঙ্গ। তাদের ছবি ওঠানোর পর এক ইংরেজ সুন্দরী সঙ্গী হলো গাইড হিসেবে মিউজিয়াম দেখাবে বলে। শুরুতে সতেরো ধাপের কাঠের সিঁড়ি ভেঙ্গে দোতলায় ওঠা, যেমন বর্ণনা আছে ‘এ স্ক্যান্ডাল ইন বেহেমিয়া’ বইয়ে।
বাংলাপিডিয়া অনুসারে হোমস ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের একটি কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র। ১৮৮৭ সালে প্রথম আবির্ভূত এই চরিত্রের ¯্রষ্টা স্কটিশ লেখক ও চিকিৎসক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। হোমস একজন উচ্চ মেধাসম্পন্ন লন্ডনভিত্তিক ‘পরামর্শদাতা গোয়েন্দা।’ নির্ভুল যুক্তিসঙ্গত কার্যকারণ অনুধাবন, যে কোন প্রকার ছদ্মবেশ ধারণ এবং ফরেনসিক বিজ্ঞানে দক্ষতাবলে জটিল আইনী মামলার নিষ্পত্তি করে দেয়ার জন্য তাঁর খ্যাতি ভুবনজোড়া।
জর্জিয়ান স্টাইলে ভবনটির র্নির্মাণ ১৮১৫ সালে। দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হয়েছে বোর্ডিং হাউস হিসেবে ((১৮৬০-১৯৩৬)। শার্লক হোমস মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯০ সালে, সেই থেকে এ পর্যন্ত দর্শক এসেছে দুই মিলিয়ন বা ৩০ লাখের বেশি। বইতে রাস্তার যে ২২১বি নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে বাস্তবে সেই নম্বর নেই, এটা একটা কল্পিত নম্বর। রাস্তার নম্বর নিয়ে শার্লক হোমস মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধ চলে অননবু ঘধঃরড়হধষ ইঁরষফরহম ঝড়পরবঃু-এর সঙ্গে। কারণ ২১৯ থেকে ২২৯ বেকার স্ট্রীট নম্বর বরাদ্দ ছিল এই সোসাইটির। শার্লক হোমস সিরিজ জনপ্রিয় হলে সারা পৃথিবী থেকে প্রতিদিন শার্লক হোমসের নামে এত চিঠি আসত যে সে সব চিঠির উত্তর দেয়ার জন্য এই বিল্ডিং সোসাইটি একজন সেক্রেটারি নিযুক্ত করে সে শার্লক হোমসের হয়ে চিঠির উত্তর দিতে থাকে।
মিউনিসিপাল কর্তৃপক্ষ রাস্তার ২২১বি হোল্ডিং নম্বরটি বরাদ্দ করে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে এবং অনেক বছরের পুরনো বিবাদ নিষ্পত্তি হয়।
দোতলা থেকে মিউজিয়াম শুরু। বসবার ঘর, পড়ার ঘর, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, ফায়ারপ্লেস, শার্লক হোমস ও ডাঃ ওয়াটসনের শোয়ার ঘর, বাথরুম এমন কি বাড়িওয়ালি মিসেস হাডসনের বেডরুমও রয়েছে মিউজিয়াম ভবনে। সেই সময়ের টাইপ রাইটার, অতশী কাচ, ডাঃ ওয়াটসনের হাতে লেখা ডায়েরি, ডাঃ মরটিমারের লাঠি, কি নেই। সব ঘর এবং প্রতিটি ঘরের মেঝে দেয়াল, ব্যবহার্য্য প্রতিটি দ্রব্য শার্লক হোমস বইয়ের বর্ণনা অনুসারে আসবাব এবং বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করে নিখুঁতভাবে সাজানো হয়েছে মিউজিয়াম। প্রতিটি ঘরে ঢুকে মনে হয় চেনা কোথাও এসেছি। যাদের শার্লক হোমস পড়া আছে তাদের এমনটিই মনে হবে। তিনতলার ঢুকে চমকে উঠি, বিছানায় আধশোয়া সদ্যমৃত একজন। কাছে গিয়ে দেখি মানুষ না মানুষেরই মতো মোমের তৈরি হোমস সিরিজের এক চরিত্র। অন্য ঘরেও হোমসের বিভন্ন কাহিনী থেকে নেয়া কোন দৃশ্যের রেপ্লিকা। আমাদের গ্রুপে ভিনদেশীও ছিল, তাদের কেউ কেউ নতুন ঘরে ঢুকলে রেপ্লিকা দেখে বলে ওঠে দি হাউন্ড অব বাস্কারভিলস বা দ্য সাইন অব দি ফোর...।
শার্লক হোমস কাহিনীকার স্যর আর্থার কোনান ডয়েলের জন্ম স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় ১৮৫৯ সালের ২২ মে। ডাক্তারী পাস করে প্রাকটিস শুরু করেন, জাহাজে চাকরি নিয়ে ঘোরেন বহুদেশ। তনি ছিলেন একজন ভাল স্পোর্টসম্যানও, ক্রিকেটার,
বক্সার, গলফার। সব খেলাতেই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর খেলোয়াড় এবং ফুটবল খেলায় হতেন গোলকিপার।
স্যর আর্থার কোনান ডয়েলের প্রথম রহস্য কাহিনীর বই A study in Scarlet প্রথমে পত্রিকায় এবং পরে বই আকারে প্রকাশিত হয় ১৮৮৭ সালে। প্রথম বই-ই তুমুল পাঠকপ্রিয়তা পায়। একে একে বেরুতে থাকে তার গল্প উপন্যাস। শার্লক হোমস জনপ্রিয় হন বিশ্বব্যাপী। অনুবাদ হতে থাকে বিভিন্ন ভাষায়। বিশ্বব্যাপী ভক্ত ও ফ্যান গড়ে ওঠে। অনকেই বিশ্বাস করে শার্লক হোমস ও ডা ওয়াটস জীবন্ত চরিত্র। এই ধারণা গড়ে ওঠায় সহায়তা করে বইতে ব্যবহৃত নামফলকে লেখা পরিচিতি, ২২১বি বেকার স্ট্রীট, শার্লক হোমস, কনসালটিং ডিটেকটিভ। সারা পৃথিবী থেকে প্রতিদিন অসংখ্য চিঠি আসতে থাকে শার্লক হোমসের কাছে পরামর্শ চেয়ে, রহস্য সমাধানের অনুরোধ করে। যার জন্য Abbey National Building Society একজন সেক্রেটারি নিয়োগ করে। চিঠি পড়ে শার্লক হোমস হয়ে উত্তর দেয় এই সেক্রেটারি।
হোমস কাহিনীর পটভূমির সময়কাল ১৮৮০ থেকে ১৯০৭ সাল; শেষ ঘটনাটির সময়কাল অবশ্য ১৯১৪।
লেখক হোমস নামটি নেন মার্কিন লেখক অলিভার ওয়েন্ডেল হোমসের নাম থেকে। আর হোমসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লেখক কোনান ডয়েলের নিজের এবং রহস্য অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণের অনুপ্রেরণা পান ডাঃ জোসেফ বেলের কাছে থেকে। এডিনবরায় রয়েল ইনফার্মারিতে কর্মরত থাকাকালে তার সহকারী ছিলেন ডাঃ কোনান ডয়েল। মর্মভেদী সূক্ষ্ম দূরদৃষ্টি, অনুসন্ধান যুক্তি, ফরেনসিক বিংগানের ব্যবহারে পারদর্শি ছিলেন কোনান ডয়েল। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেকের পক্ষ নিয়ে তাদের নির্দোষ প্রমাণ করেছিলেন ।
কোনান ডয়েল শার্লক হোমস বিশ্বযুদ্ধ সিরিজে চারটি উপন্যাস এবং ছাপ্পান্নটি রহস্য গল্প ছাড়াও লিখেছেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ছয খন্ডের ঞযব ইৎরঃরংয ঈধসঢ়ধরমহ রহ ঋষধহফবৎং। শার্লক হোমস কাহিনী ছাড়াও লিখেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প, ইতিহাস, কৌতুক এবং কল্পবিজ্ঞান নিয়ে। আফ্রিকার বুয়র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, লেখেন ঞযব এৎবধঃ ইড়বৎ ধিৎ এবং ঞযব ধিৎ রহ ঝঁঃয অভৎরপধ। লেখার জন্য তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পান নাইট উপাধি।
অর্থোপার্জনের জন্য কোনান ডয়েল লেখা শুরু করেন। A study in Scarlet লিখেছিলেন ২৭ বছর বয়সে, তিন সপ্তাহে। প্রথম বইয়ের স্বত্ব বিক্রি করে পেয়েছিলেন মাত্র ২৭ পাউন্ড। অবশ্য এখনকার হিসাবে তা ২৭০০ পাউন্ড।
মিউজিয়াম দেখার নির্ধারিত সময় শেষে বেরিয়ে আসি সেই ২৭ ধাপের কাঠের সিঁড়ি ভেঙ্গে। বাইরে উজ্জ্বল রোদ ব্যস্ত লন্ডন নগরী। কিন্তু আমরা আচ্ছন্ন হয়ে থাকি শার্লক হোমসের গল্প কাহিনী এবং কাহিনীর সময়কালে।