করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





মানবশূন্য ম্যানহাটন
রোমেনা লেইস

দুপুর বারোটা। জোন্স বীচ। লং আইল্যান্ড। নিউইয়র্ক। আজ বিশ এপ্রিল। এই মুহূর্তে তাপমাত্রা এখানে ৫২ ডিগ্রী। বিশ পঁচিশটি গাড়ি পার্কিং লটে। জোন্স বিচের ফিল্ড পাঁচে।বাথহাউসের পাশেই পার্কিং করে আমরা নামলাম।পুরা বেলাভূমি জুড়ে কেউ নেই। আটলান্টিকের সীমাহীন ঢেউ
এসে আছড়ে পড়ছে। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম বালুতটে।
পুরা সীবীচ জুড়ে একজন মানুষ শুধু  মাছ ধরছে। আর
একটি গাঙচিল। গাঙচিল বালিতে শরীর ডুবিয়ে বসে রোদ পোহাচ্ছে। আমি খালি পায়ে ঢেউ এর জলে পা ডুবিয়ে বুঝলাম ভুল হয়ে গেছে। পানি বরফ শীতল এখনো। গুটিকয়েক ছবি তুলে বুক ভরে টেনে নিই অক্সিজেন ।গাঙচিলকে বলি তুমি করোনার ভয়ে ভীত? সে ডানা ঝাপটায়।
আকাশ আজ মেঘঢাকা। যে বীচে পার্কিং লটে জায়গা পাওয়া মুশকিল, মানুষে মানুষে ভরা থাকে সমুদ্রতট। সেখানে কোভিড-১৯ এর ভয়ে আজ কোন মানুষ নাই। যারা গাড়ি করে এসেছে তারাও বসে আছে গাড়িতে । হয়তো বা ঢেউ এর গর্জন শুনছে বসে। মানুষ আসলে ভীত। জীবন সবার কাছেই প্রিয় । অবেলায় কেউ জীবন হারাতে চায় না। কোভিড-১৯ এর কাছে পরাজিত হতে কেউ চায় না। পথে গাড়ি খুব কম ছিলো ।ব্রুকলিনে হেঁটে পথ চলছে যারা সবাই মাস্ক পরে ছিলেন। সতর্কতা নিয়ে নিত্য প্রয়োজনে বের হতে হয়। জীবন কখনো থেমে থাকে না। জীবনের প্রয়োজনে বের হতে হয়। ঔষধ কিংবা খাবারের জন্য। তাই রাস্তায়ও মানুষজন দেখা যায়। যদিও পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় মানুষ সচেতন থাকছে যাতে এই করোনাকালে নির্ধারিত দূরত্বটুকু বজায় থাকে।
যেদিন রোদঝলমল থাকে দিনের অনেকটা সময়, সেদিন লোকেরা বেশি সংখ্যায় ঘরের বাইরে যায়। তা দরকারেই হোক, কিংবা শুধু বেড়ানোর জন্যেই হোক। শনি রোববার বহু মানুষ নিশ্চয়ই হাওয়া খেতেই বের হয়। তবে প্রণোদনা চেক হাতে পেয়ে গ্রোসারীতে প্রচন্ড ভীড়। আর রমজান মাস সামনে। তাই ভীড় বাংলাদেশী গ্রোসারীতে।নিউইয়র্ক নগরী যেখানে তিনবেলার শিডিউলে কাজ করে মানুষ ।তাই কখনো ঘুমায় না যে নগরী, সে নগরী এখন দিনেও ঘুমিয়ে আছে।
পরিবারের সবাই মিলে গল্পগুজব, রান্না বান্না, খেলাধুলা, এটা সেটা করা-- এভাবে সময় অবশ্য কেটেই যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে অধৈর্য্য হয়ে উঠি। তবু ভাল যে ইন্টারনেটের এই যুগে সারা বিশ্বে সবার খোঁজ খবর নিতে পারছি।
একুশে এপ্রিল আজ ম্যানহাটন গিয়েছিলাম। টাইম স্কয়ারের যে চত্বরে পর্যটকের উপচে পড়া ভীড়, কনসার্ট লেগেই থাকে। আজ সেখানে দু একজন ফুড ডেলিভারী বয় ছাড়া কাউকেই দেখলাম না। জন জে কলেজ আর ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটির পাশ দিয়ে আসার সময় স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম। ছেলে মেয়েদের উপচে পড়া ভীড় যেখানে গমগম করে। লিঙ্কন সেন্টারে যেখানে থিয়েটারপ্রেমীরা এক শো ভাঙতেই হামলে পড়তো পরের শোর জন্য, সেসব আজ শুধু স্মৃতি। ফোয়ারার পাশে অকারণে পা ছড়িয়ে বসে থেকেছি দেখেছি নানা রঙের মানুষ ।মানবশূন্য ম্যানহাটন। যেখানে রুফটপ রেস্টুরেন্ট আর রাস্তাগুলোয় মানুষের ভীড়ে মানুষকে পিঁপড়ার মতো লাগে। সেখানে মানুষজন নেই। সব ফাঁকা।
ওয়াল স্ট্রিট, লিঙ্কন সেন্টার। ম্যানহাটনের রাস্তায় নাই হলুদ ক্যাব। এ যেন মৃত্যু পুরী। সেই ছেলেবেলায় শোনা রূপকথার রাজকন্যা যেন পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবার কবে জেগে উঠবে এ নগরী?
গত একমাস গৃহবন্দি আমরা। এদেশে ছাদে উঠার অনুমতি নাই। সুপারের কাছে অনুমতি নিয়ে প্রতিদিন (যেদিন তাপমাত্রা বেশী) ছাদে যাই ত্রিশ মিনিটের জন্য। নিয়ন্ত্রিত জীবন যেন জেলখানার জীবন। গ্লভস মাস্ক পড়ে এলিভেটরের বাটন টিপে অপেক্ষায় থাকি। তারপর ছয়তলায় গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে সন্তর্পণে উপরে যাই আমি আর আমার মেয়ে। রোদ আর খোলা হাওয়ায় শরীরের প্রয়োজনীয় হাঁটাহাটি  করে ফিরে আসি।
নিউইয়র্কে মৃত্যুর সংখ্যা দিনে ৫০০ জনের নিচে নেমে এসেছে। এটাই এ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মৃত্যু সংখ্যার রেকর্ড। শিগগির রাজ্যের সব কিছু খুলে দিতে এবং ভাইরাস শনাক্ত করতে নিউইয়র্কে আগ্রাসী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। গভর্নর ও মেয়র আর প্রেসিডেন্টের টাগ অব ওয়ার চলছে ।এদিকে ২০ এপ্রিল মৃত্যুর মিছিলে আরও ৪ বাংলাদেশির নাম যোগ হয়েছে। করোনার ছোবলে নিউ ইয়র্কের প্রিয়মুখ ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস আজ ২১ এপ্রিল রাত ৮টা ৫ মিনিটে হাসপাতালে পরলোক গমন করেন। বেশকিছুদিন ধরেই তিনি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় করোনার সাথে লড়ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। আর এ নিয়ে আমেরিকায় ১৮০ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হলো। আশা করি অচিরেই কোভিট-১৯ কে জয়  করতে পারবো। আবার সব স্বাভাবিক হবে।