করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





করোনা জয়ের গল্প: স্পর্শ
মূল: কারিনা এম জুরেখ / অনুবাদ: ফজল হাসান

সময়ের পরে সময়। এভাবেই সে বিশৃঙ্খলায় পরিণত হওয়ার ঘটনা মনে রেখেছে।
টনির মনে হয় চিকিৎসার পরে শুভ্র পোশাক পরিহিত মহিলাই ম্যাসাজ করার তেল ক্রয় করেছে। তার ধৈর্য্য শূন্যের কোঠায় ঠেকেছে। কেননা মহিলা যেভাবে জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করছিল এবং নিজস্ব সীমানা অতিক্রম করে সব ধরনের নমুনা বের করে এনে তাকে দেখানোর জন্য টনির সহকারীকে রীতিমতো বাধ্য করার চেষ্টা করছিল, তাতেই টনির ধৈর্য্যে টান পড়ে। মহিলা বেশ কয়েকবার কাশে, কিন্তু কাশির সময় সে মুখ ঢাকেনি। তার মুখমন্ডল আরক্তিম হয়ে ওঠে এবং নাকের আশেপাশে ঝলমল করে।
‘খদ্দের হলো মহারানী!’ বচনটি টনির মালিক স্পা-এর অভ্যর্থনা কক্ষের সম্মুখের টেবিলের পেছন দিকের দেওয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছে। কর্তৃপক্ষের সমস্ত নির্দেশনা জানা সত্ত্বেও টনি অভদ্র হতে চায়নি। যা-ই হোক না কেন, তারপর তাকে চাকুরি হারাতে হয়েছে। কর্মচারী সবাই চাকুরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।
পুরো বিশ্ব তাকে নিয়ে মেতে উঠেছে।
‘মানবিক চেতনার মাঝে বেঁচে থাকার সহজাত তাগিদ কোন মতেই কম গুরুত্বের মনে করা উচিত নয়,’ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হওয়ার পরে টনি যখন অন্য আরেক পারিবারিক ডাক্তারের প্র্যাকটিসে অভ্যর্থনাকারিনী হিসাবে যোগদান করে, তখন ডা. দুবে তাকে বলেছেন। তাদের কাছে ছিল নতুন ভ্যাকসিন। তাই সেখানে সে নির্বিঘেœ কাজ করার অনুকূল পরিবেশ আন্তরিক ভাবে অনুভব করেছে। তা জানা সত্ত্বেও এবং ঘটনা যা-ই ঘটুক না কেন, তাকে দরকার এবং সেখানে তার দেখভালের সমস্ত দায়িত্ব নেওয়া হবে।
সঙ্গনিরোধকালের, অর্থাৎ আইসোলেশনের সপ্তাহগুলো ছিল কঠিন এবং নিঃসঙ্গ। যদিও টনির হালকা সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তবে মোটামুটি সে ভালোই ছিল। তার সেভিংস অ্যাকাউন্টে দাদিমার সামান্য উত্তরাধিকার জমা ছিল।
‘বৃষ্টির দিনে,’ টনি যখন দাদীমার অসুস্থতার শেষ কয়েক মাস ধরে তার উইলের কাগজপত্র চূড়ান্ত করছিল, তখন একদিন দাদীমা বলেছিলেন। ফুসফুসে ফাইব্রোসিস। মহামারীর এক বছর আগে তিনি সেই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং বৃদ্ধাশ্রমে ভাইরাস তা-ব চালানোর আগেই দেহত্যাগ করেন।
অনেক পরে, টনি একে করুণা ভেবেছে, যে দাদীমার ইচ্ছা অনুযায়ী তারা এখনও তাকে সমাহিত করতে পারে এবং শোক পালনও করতে কোন অসুবিধা নেই। তাই দাদীমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যথাযথ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে উপস্থিতি সবাই জানতো যে, দলগত ভাবে সেই শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করার মধ্যে কোনো বাধা নিষেধ নেই। তারা শুধু শোক জানাতে উপস্থিত হয়েছিল।
মাত্র কয়েক মাস পরে কমপ্লেক্সের ভেতর টনির পাশের বাসার পড়শী মিসেস জ্যাকবসনের ভাগ্য কিন্তু এতটা সুপ্রসন্ন ছিল না। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া স্থগিত রাখা হয় এবং তার পরিবারের লোকজন ও বন্ধু-বান্ধবেরা আইসোলেশনে থেকে শোক পালন করে।
একসময় যখন তাদের একসঙ্গে মিলিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, তখন মিসেস জ্যাকবসনের ছেলে টনিকে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিতি থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এছাড়া মায়ের প্রয়োজনে টনির মতো একজন ভালো প্রতিবেশী পাওয়ার জন্য মিসেস জ্যাকবসনের ছেলে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে। কিন্তু টনি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিতি থাকতে পারেনি।
টনি পুনরায় প্রতিদিনের পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়, যেমন মানুষজন, ট্রাফিক, বাজার, অসম্ভব ত্রস্ত-ব্যস্ততা, লোভ-লালসা এবং গতানুগতিকতা। কিন্তু সহজেই সে নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারে না। সবাই স্পর্শ করে যায়। চেম্বারে রোগীরা কাছাকাছি বসে থাকে। ডাক্তার রোগীদের সঙ্গে করমর্দন করে। বান্ধবীরা তাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করে। তাদের মাঝে হাসির তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। তখন সে চারপাশে স্পর্শকাতর স্মৃতি ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়।
সন্দেহ ছাড়া তার হাতের দিকে তাকানো অসম্ভব। শুভ্র পোশাক পরা মহিলাকে স্মরণ না করে এবং কিছুদিন পরে যখন তার মধ্যে অসুস্থতার কোন লক্ষণ পাওয়া যায়নি, তখন চেম্বার বন্ধ করার প্রস্তুতির সময় সে তার সাধ্যমত সাহায্য-সহযোগিতা করে।
টনি নিশ্চিত হতে চায় যে, মিসেস জ্যাকবসন তার কারণে মারা যায়নি।

***
লেখক পরিচিতি: দক্ষিণ আফ্রিকার নারী লেখক কারিনা এম জুরেখ একাধারে একজন গল্পকার, সম্পাদক এবং সাহিত্য সমালোচক। সম্প্রতি তাঁর একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যেমন ‘দ্য ফিফ্থ মিসেস ব্রিঙ্ক’, স্মৃতিগদ্য ‘ইউ মেইক মী পসিবল: দ্য লাভ লেটারস্ অব কারিনা এম জুরেখ অ্যান্ড আন্দ্রে ব্রিঙ্ক’ এবং ‘হেয়ার: ওয়েভিং অ্যান্ড আনপিকিং স্টোরিজ অব আইডেনটিটি’।
গল্পসূত্র: ‘স্পর্শ’ গল্পটি কারিনা এম জুরেখের ইংরেজিতে ‘টনি’স টাচ’ গল্পের অনুবাদ। গল্পটি জোহান্সবার্গ থেকে প্রকাশিত ‘সানডে টইমস্’-এ গত ২৯ মার্চে প্রকাশিত হয়। গল্পটিতে করোনাভাইরাস কিভাবে নিঃশেষিত হতে পারে, তারই কাল্পনিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।