করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





অকালে ঝরে পড়া এক নক্ষত্র
আলমগীর মোহাম্মদ

বায়রনের জন্ম ১৭৮৮ সালে লন্ডন শহরে। ফরাসি বিপ্লবের আগের বছর। অপ্রীতিকর শৈশবের পর তিনি বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হন। অতুলনীয় সৌন্দর্যের অধিকারী বায়রনের এক পা কিছুটা খোড়া ছিল। কন্ঠাকীর্ণ জীবন ছিল তাঁর। সমসাময়িক সাহিত্যিক স্কট তাঁর সম্পর্কে বলেছেন ;' বায়রন একজন  সত্যিকার আন্তরিক হৃদয়ের মানুষ।' ১৮০৭ সালে ক্যাম্ব্রিজে পড়ার সময় তাঁর প্রথম বই " Hours of Idleness"  ছাপা হয়। শুরুতেই প্রচন্ড সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে এই বইয়ের জন্য।  পোপের কবিতা আর টেস্টামেন্ট ছিল তাঁর অনুপ্রেরণার উৎস।

১৮০৯ Childe Harold's Pilgrimage এর প্রথম দুই ক্যান্টো লেখার পর রাতারাতি বিখ্যাত ব'নে যান বায়রন। বয়স তখন একুশ। ইউরোপ ও প্রাচ্য ভ্রমণের ফসল এই লেখা। আত্মতুষ্টিতে ভোগা কবি নিজেই মন্তব্য করেন, ' I woke one morning to find myself famous. ' অন্য জায়গায় নিজেকে ' the Grand Napoleon of the realms of rhyme'  দাবি করেন তিনি। তাঁর লেখা চারদিকে অনুদিত হলো। সবাই তাঁর  ভূয়সী প্রশংসা করলেন।  এমনকি গ্যেটে মন্তব্য করলেন এই বলে যে বায়রনের মতো একজন মহত্তম ব্যক্তির আবির্ভাব সাহিত্যজগতে আগে ঘটেনি এবং এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না৷ কিন্তু তাঁর সেই সুদিন বেশিদিন টিকল না।

১৮১৫ সালে তিনি বিয়ে করলেন মিস মিলব্যানকে নামক এক ইংরেজ উত্তরাধিকারিণীকে। এক বছরের মধ্য তাঁদের ছাড়াছাড়ি হলে জনমনে তাঁকে নিয়ে সন্দেহের ডালাপালা দানা বাঁধতে শুরু করে। অবশ্যই ভদ্রমহিলা নিজে মুখ খুলেননি। অবিশ্বাসের কালো মেঘ যখন পুঞ্জিভূত হচ্ছিল ঠিক তখন তিনি ইংল্যান্ড ত্যাগ করেন। আর ফিরে আসেননি  পরবর্তী আট বছর কাটিয়ে দেন ইতালিতে। ওখানে তাঁর দেখা হয় শেলীর সাথে।  ১৮২২ সালে শেলীর আকস্মিক মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত উভয়ের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ একটা সম্পর্ক ছিল। স্বেচ্ছানির্বাসনের এই সময়কালে তিনি "Childe Harold", " The Prisoner of Chillion", এবং " Cane and Manfred "  নামে একটি নাটক লেখা শেষ করেন।

ইতালিতে বায়রনের বাসা ছিল বিপ্লব মনষ্কদের অন্যতম আঁতুড়ঘর। তিনি নিজ খরচে এদের আপ্যায়ন করতেন। এটা বিস্ময়কর যে তিনি মানুষকে সহজে বিশ্বাস করতেন কিন্তু সমাজ বা সরকারকে নয়। ১৮১৭ সালে তিনি লিখেন;
আমি আমার রাজনৈতিক বিবেচনাবোধের সহজীকরণ শেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে দুনিয়ার সকল বর্তমান শাসকদের জন্য আমার ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নেই।'

১৮২৪ সালে গ্রীসে যান বায়রন। সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন স্বপ্রণোদিত হয়ে। তারা তাঁকে নেতাও বানিয়ে নেয়। কিন্তু কয়েক মাসেত মধ্যে তিনি আবিষ্কার করেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন এবং  চারদিকে অবিশ্বাস ও ঘৃণার উপস্থিতি টের পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেন। ঐ বছরই জ্বরে পড়ে ১৯ শে এপ্রিল  মারা যান তিনি।

মৃত্যুর কয়েকমাস আগে ছয়ত্রিশতম জন্মদিনে  নিজের হতাশাজনক জীবনের দিকে ইঙ্গিত করে কবি লিখেন;

আমার দিনগুলো হলুদ  এখন পাতায়,
ভালোবাসার ফুল ও ফলগুলো ঝরে গেছেঃ
পোকা, কীট, এবং দুঃখ
আমার একান্ত নিজের।

ক্ষণজন্মা  এই কবির প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা জানাই।