করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৫ সংখ্যা
ডিসেম্বর ২০২৩

লেখক-সংবাদ :





ফেসবুক থেকে
উস্তাদ বাহাদুর হুসেন খাঁ
ওমর শামস
আমি যখন ১৯৮৪ সনে বহুকাল আমেরিকায় থেকে ঢাকা বেড়াতে গিয়েছিলাম, সে-বার বাহাদুর হুসেন খাঁ সাহেবের একটা সরোদ অনুষ্ঠান করি বড় ভাইয়ের বাড়িতে। তখন তিনি আমার সৌভাগ্য-বশত ঢাকায় এসেছিলেন কোলকাতা থেকে। সন্ধ্যার দিকে তিনি বাজাতে বসলেন। ধানমণ্ডিতে একতলা বাড়ি কিন্তু একটা সুন্দর ঘোরানো সিঁড়ির নিচে বৈঠক ঘর। প্রধানত বড় ভাইয়ের বন্ধুরা আমন্ত্রিত। উনি বাজাতে শুরু করলেন। তবলায় সম্ভবত অনিল ভট্টাচার্য ছিলেন। বাঙালরা কিছুক্ষণ পরেই নিজেদের মধ্যে ফিসফাস কথা শুরু করলো। আমি বোধ হয় বলেই ফেলেছিলাম, ‘কথা বলতে হলে বাইরে গিয়ে বলুন’। আমি, আমার বউ, আর এক তরুণ তাঁর সামনেই বসেছিলাম। একটা গ্রুন্ডিগ টেপ চালিয়ে রেখেছিলাম রেকর্ডিং-এর জন্য। তিনি শুরুর সময় বললেন, ‘ধ্যানেশ্বরী বাজাবো। আমারা কথেকে এসেছি, কেন এসেছিÑ এই সব আছে এর মধ্যে’। আলাপ বাজালেন আধঘন্টা ধরে। তারপর গতে ‘কিরওয়ানি’-তে চলে গেলেন। এরপর বোধ হয় ছোট কিছু বাজিয়েছিলেন।
আমরা তিনজনই তাঁর একাগ্র এবং উন্মুখ শ্রোতা ছিলাম। বাজানোর শেষে তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আশলে শ্রোতা বেশি লাগে না। গুণগ্রাহী থাকলেই হয়। এইজন্যই মনে হয়, আরেকটা বিয়া করি।’ একদম সরল শিশুর মতো উচ্চারণ। কিন্তু কথাটার মধ্যে এক ধরনের সত্যতা আছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে শিল্পীকে আদ্যন্ত আরাধনায় নিয়োজিত থাকতে হয়। পরিবার পুত্র-কন্যা থাকলেও, সেদিকে অন্য মানুষের তুলনায় নজর কম থাকে। সঙ্গীতের মহল এক জিনিশ আর বাস্তব সংসার আরেক। আলী আকবর খান বলেছিলেন, ‘মনের উপযোগী নারী সান্নিধ্য পেলাম না’, যদিও তিনি অনেকগুলো বিয়ে করেছিলেন।

বাহাদুর খাঁ সাহেব বাংলাদেশে খুব একটা সমাদর সম্বর্ধনা পান নি। সেহেতু ৭০-এর দশকে তিনি কোলকাতায় চলে যান। এর সঙ্গে পোস্টেড তাঁর বাজানো আহির-বিভাস শুনুন। সিমপ্লি অপূর্বÑ সুরের তন্ময়তায় তিনি শ্রোতাকে দেবলোকে পৌঁছতে পারেন। উস্তাদ সালামত আলী খাঁ আরেকটি গল্প বলেছিলেন আমাকে। সম্ভবত ১৯৫৮-র দিকে কোলকাতায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত আলী আকবর মিউজিক প্রতিষ্ঠানে তিনি ও নাজাকাত আলী খাঁ আমন্ত্রিত হয়ে খেয়াল গেয়েছিলেন। সেখানে বাহাদুর খাঁ, অন্নপূর্ণা সহ উস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ-ও ছিলেন। দুই ভাই এক অসাধারণ নটনারায়নী গেয়েছিলেন সেই প্রোগ্রামে। পরদিন বাহাদুর খাঁ সালামত আলী খাঁ-র কাছে গিয়ে ওই রাগ নিয়ে আলাপ করেন এবং আরও জানতে চান। সালামত আলী খানের ভাষ্যে, “ আ-কে বাচ্চোকে তরাহ্ বৈঠ গ’য়ে। আওর হমনে রাগকা অন্দরুনী বাত সমঝায়া।” বাহাদুর খাঁ-র সরোদ সম্বন্ধে সালামত আলী খাঁ এবং তাঁর ছেলে শরাফৎ উভয়েই তারিফ করেছিলেন । আমার সঙ্গীত জগতের বন্ধু সকীব রাজাক বলেছে পাকিস্তান রেডিওতে উস্তাদ বাহাদুর হুসেন খাঁ-র তবলিয়া তালিব হুসেন খাঁ-র সঙ্গে বাজানো দুর্দান্ত রেকর্ডিং আছে। ওকে অনুরোধ করেছি, সেটা জোগাড় করতে।

বাসার প্রোগ্রামের পরে গাড়িতে তুলে দেবার সময় বলেছিলাম, ‘আপনি দেশে চলে আসেন না কেন? আমেরিকায় আসুন বাজানোর জন্য।’ উনি নীরব ছিলেন। যে দেশ গুণীকে সম্মান দিতে জানে না, সেখানে কালক্রমে গুণী জন্মায় না।