করোনাকাল
বিচ্ছিন্ন অনুভব
মাহফুজা হিলালী

প্রবন্ধ
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
শামসুজ্জামান খান

গল্প
ডায়মন্ড লেডি ও পাথর মানব
হামিদ কায়সার

গদ্য
নিদ্রা হরণ করেছিল যে বই
মিনার মনসুর

নিবন্ধ
পঞ্চকবির আসর
সায়কা শর্মিন

বিশ্বসাহিত্য
আইজাক আসিমভের সায়েন্স ফিকশন
অনুবাদ: সোহরাব সুমন

বিশেষ রচনা
প্রথম মহাকাব্যনায়ক গিলগামেশ
কামাল রাহমান

শ্রদ্ধাঞ্জলি
মুজিব জন্মশতবর্ষ
মারুফ রায়হান
 
সাক্ষাৎকার
কথাশিল্পী শওকত আলী

জীবনকথা
রাকীব হাসান

ভ্রমণ
ইম্ফলের দিনরাত্রি
হামিদ কায়সার

ইশতিয়াক আলম
শার্লক হোমস মিউজিয়াম

নিউইর্কের দিনলিপি
আহমাদ মাযহার

শিল্পকলা
রঙের সংগীত, মোমোর মাতিস
ইফতেখারুল ইসলাম

বইমেলার কড়চা
কামরুল হাসান

নাজিম হিকমাতের কবিতা
ভাবানুবাদ: খন্দকার ওমর আনোয়ার

উপন্যাস
আলথুসার
মাসরুর আরেফিন

এবং
কবিতা: করেনাদিনের চরণ

১৬ বর্ষ ০৭ সংখ্যা
ফেব্রুয়ারি ২০২৪

লেখক-সংবাদ :





মার্গারেট এট্যুউডের কবিতা
মুম রহমান অনূদিত



মার্গারেট এট্যুউড (জন্ম ১৯৩৯) কানাডার গুরুত্বপূর্ণ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, কবি ও সম্পাদক। পরিবেশবাদী হিসেবেও পরিচিতি আছে তাঁর। প্রায় ৩০টি ভাষায় তাঁর লেখা অনূদিত হয়েছে। তিনি কানাডার রাইটার্স ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট।










এটা আমার একটা ছবি

বেশ আগে এটা তোলা হয়েছিলো
প্রথমত এটা মনে হতে পারে
একটা শস্তা
প্রিন্ট: ঝাপসা রেখা আর ধূসর কণা
কাগজে মেশানো হয়েছে;

তারপর, যদি তুমি এটা গভীরভাবে দেখো
তুমি বাঁহাতের কোণার দিকে দেখবে
শাখার মতো একটা কিছু: একটা গাছের অংশ
(সুগন্ধি অথবা সুতনু) ফুটে উঠছে
এবং, ডানদিকে, মাঝের উপর দিকে
যেটাকে একটা মৃদু ঢাল মনে হবে
সেটা একটা ছোট্ট খামার বাড়ি।

পশ্চাৎপটে একটা হ্রদ আছে,
আরও দূরে, কিছু নিচু টিলা।

(ছবিটা তোলা হয়েছিলো
আমি যেদিন ডুবে ছিলাম তারপরে।

আমি হ্রদের ভেতরে, মাঝখানে
ছবিটির, ঠিক উপরিতলের নীচের দিকে।

এটা বলা খুব কঠিন, কোথায়
ঠিক কোনখানে, অথবা
আমি কতোটা বড় বা ছোট:
পানির উপর আলোর
বক্রতার কারণে

কিন্তু তুমি যদি দীর্ঘ সময় ধরে দেখো,
শেষ পর্যন্ত
আমাকে তুমি দেখতে পাবে।)

বসতি

বিয়ে নয়
একটি বাড়ি কিংবা একটি তাঁবুও নয়।

এটা তারও আগের কিছু এবং শীতলতর:

অরণ্যের একটা প্রান্ত, প্রান্ত
এক মরুভূমির
রঙহীন কোন সিঁড়ি
যার পেছনের দিকে উবু হয়ে
বাইরে বসে, পপকর্ন খাচ্ছি

 যেখানে বেদনাভরে এবং বিস্ময়ে
 টিকে আছি এমনকি
এতোদূর

আমরা শিখছি আগুন বানানো।

দরজাটি

দরজাটা দুলতে দুলতে খুলে যায়,
তুমি ভেতরে তাকাও।
ওখানে অন্ধকার,
অনেকটাই মাকড়শার মতো:
তুমি কিছুই চাও না।
তুমি ভয় অনুভব করো।
দরজাটা দুলতে দুলতে বন্ধ হয়ে যায়।

পূর্ণ চাঁদ ঝলমল করে,
এটা সুস্বাদু রসে ভরা;
তুমি একটা টাকার থলে কিনলে,
নৃত্যটি মনোহর।
দরজা খুলে যায়
এবং এতো দ্রুত দুলে বন্ধ হয়ে যায়
তুমি খেয়াল করোনি।

সূর্য বেরিয়ে আসে,
তুমি দ্রুত প্রাতরাশ করে নাও
তোমার স্বামীর সাথে, যে এখন পাতলা;
তুমি থালাবাসন ধুয়ে নাও,
তুমি তোমার শিশুদের ভালোবাসো,
তুমি একটা বই পড়ো,
তুমি মুভি দেখতে যাও।
মৃদু বৃষ্টি ঝরে।

দরজাটা দুলতে দুলতে খুলে যায়,
তুমি ভেতরে তাকাও :
এটা কেন ঘটতে থাকে?
এর কি কোন গোপনীয়তা আছে?
দরজাটা দুলতে দুলতে বন্ধ হয়ে যায়।

তুষার পড়ছে,
তুমি ভারী নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে রাস্তাটা পরিস্কার করো;
এটা আগের মতো সহজ নয়।
তোমার ছেলেমেয়েরা মাঝে মাঝে ফোন করে।
ছাদটার মেরামত দরকার।
তুমি নিজেকে ব্যস্ত রাখো।
বসন্ত চলে আসে।

দরজাটা দুলতে দুলতে খুলে যায়,
ওখানে অন্ধকার,
অনেকগুলো ধাপ নিচে নেমে গেছে।
কিন্তু চকচক করছে ওটা কি?
ওটা কি জল?
দরজাটা দুলতে দুলতে বন্ধ হয়ে যায়।

কুকুরটি মরে গেছে।
এটা আগেই ঘটেছিলো।
তুমি আরেকটা পেয়েছো; যদিও এবার নয়।

তোমার স্বামী কোথায়?
তুমি বাগানের হাল ছেড়ে দিয়েছো।
এটা বড় বেশি হয়ে গেছে।
রাত্রিরে কম্বল আছে;
অন্যদিকে তুমি জেগে আছো।

দরজাটা দুলতে দুলতে খুলে যায়:
হে কব্জার ঈশ্বর,
দীর্ঘযাত্রার ঈশ্বর,
তুমি বিশ্বাস রেখেছো।
ওখানে ভেতরে অন্ধকার।
তুমি অন্ধকারের উপর বিশ্বাস রাখলে
তুমি ভেতরে গেলে।
দরজাটা দুলতে দুলতে বন্ধ হয়ে গেলো।


রাত্রির কবিতা

এখানে ভয়ের কিছু নেই,
এটা নেহাতই বাতাস
দিক বদলাচ্ছে পূবে, এ নেহাতই
তোমার বাবা, বজ্র
তোমার মা বৃষ্টি

এই জলের দেশে
এই ধূসর পশমি কাপড়ের মতো চাঁদ যেন স্যাঁতস্যাতে মাশরুম,
ডুবে যাওয়া কাঠের গুড়ি আর অসংখ্য পাখি
সাঁতার কাটে, যেখানে শ্যাওলা জন্মায়
গাছের চারিপাশে
আর তোমার ছায়া তোমার ছায়া নয়
কিন্তু তোমার প্রতিফলন।

তোমার সত্যিকারের বাবা-মা উধাও
যখন পর্দা নেমে আসে দরজায়।
আমরা অন্য বাবা-মা
হ্রদের তলদেশ থেকে উঠে আসা
যরা নীরবে তোমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়েছে
আমাদের তিমির শির নিয়ে।
আমরা এসেছি তোমাকে ঢেকে দিতে
লাল উলে
আমাদের অশ্রু আর সুদুর গুঞ্জন সহযোগে।

তুমি দোল খাও বৃষ্টির বাহুডোরে
তোমার ঘুমের শীতল নৌকায়
যখন আমরা অপেক্ষারত, তোমার রাত্রির
বাবা ও মা
আমাদের ঠা-া হাত আর মৃত ফ্লাশলাইট নিয়ে,
জানি আমরাই একমাত্র
 দোদুল্যমান ছায়া প্রক্ষিপ্ত
এক মোমের আলো থেকে, এই প্রতিধ্বনি
তুমি শুনতে পাবে বিশ বছর পর।